সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বড় ধরনের লোকসানের কবলে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও খুচরা দোকানের ব্যবসায়ীরা। মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে কলকাতার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০ হোটেল ও তিন হাজার দোকানপাটের। কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশিরা যেতে না পারায় এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা অন্তত ৭০% কমে গেছে।
কলকাতা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মনোতোষ সরকারের হোটেল মারকুইস স্ট্রিটে অবস্থিত। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, আমার হোটেলের ৩০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিরা আছেন। জুলাই থেকে হোটেলের এই অবস্থা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছেদের আগে যেকোনো সময় ২৬ থেকে ২৮ জন বাংলাদেশি অতিথি হোটেলে থাকতেন। ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের সময় যে অবস্থা হয়েছিল, এখন ঠিক একই পরিস্থিতি চলছে বলেও জানান তিনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০-১২টি রুম আছে, এমন অনেক হোটেল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব হোটেল আর চালাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
এমনই একটি খালি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের রাজেন বিশ্বাস নামের এক পর্যটক। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, আগে এই হোটেলটি তার দেশি মানুষের হাঁকডাকে গমগম করত। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনাবলির পর ভারত সরকার নতুন ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি করেছে, সে কারণেই বাংলাদেশিদের কলকাতায় আসা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
রাজেন বিশ্বাস বলেন, আমার আগেই ভিসা ছিল, তাই কলকাতায় আসতে পেরেছি। এখন যারা আবেদন করছেন, তাদের যদি জরুরি চিকিৎসার কোনো বিষয় না থাকে, তাহলে তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ভারত চিন্তিত। এ কারণে ভিসা ইস্যুতে তারা কঠোর হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আগে দেওয়া ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, তখন এখনকার এই ১০-১৫% আন্তসীমান্ত চলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে।
কলকাতার নিউমার্কেটের দোকানগুলোর বেশিরভাগ ক্রেতাই বাংলাদেশি। কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা এখানে সাধারণত কমই আসেন। এসব দোকান এখন খাঁ খাঁ করছে। দোকানদারদের আশঙ্কা, বাংলাদেশে যদি অস্থিরতা চলতে থাকে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যদি ভিসা দেওয়ায় কড়াকড়ি অব্যাহত রাখে, তাহলে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামবে।
এই নিউমার্কেট এলাকার একটি দোকান ‘চকোনাট’। এই দোকান থেকে বাংলাদেশিরা সাধারণত চকলেট, বাদাম, মসলা, কসমেটিকস কিনে। ফলে দোকানটিতে আগে প্রতিদিন বিক্রি হতো সাড়ে তিন লাখ রুপির পণ্য। কিন্তু এখন তা ৩৫ হাজার রুপিতে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে দোকানের মালিক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য যারা আসছেন, তাদের কেউ কেউ দোকানে আসছেন। কিন্তু যারা এখান থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতেন, তাদের কাউকেই একেবারেই দেখতে পাচ্ছি না।’
একটি কসমেটিকস দোকানের মালিক অজয় শ বলেন, ‘আসলে পুরো নিউমার্কেটের জন্যই পরিস্থিতি খারাপ। ২০০৮-০৯ সালের দিকে এই মার্কেটে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা কমে যায়। কিন্তু তখন নিউমার্কেট বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায় সব দোকানই তাদের (বাংলাদেশিদের) চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী মালামাল রাখতে শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে অস্থিরতা ও ভিসা সমস্যার কারণে গ্রাহকদের পাদচারণা একেবারেই কমে গেছে।’
দোকানি অজয় আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন বাংলাদেশি গ্রাহক পেতাম, যারা গড়ে ১৫ হাজার রুপি খরচ করতেন। এখন আমরা প্রতিদিন খুব বেশি হলে ৫ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পাই। আর তাদের খরচও ১০ হাজার রুপিতে নেমে গেছে।’