বস্তাবন্দি শখের হাঁড়ি!

শাহিনুল আশিক:


এবারও মেলা হচ্ছে না। তাই নেই ব্যস্ততা। বিকেলে এলাকার দোকানে জমিয়ে আড্ডায় মেতেছেন সুশান্ত কুমার পাল। তাই বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলেনি তার। ছেলে সঞ্জয় পাল বাবাকে ডাকতে পাঠান। মিনিট পাঁচেক পরে লাঠিতে ভর করে আসলেন সুশান্তকুমার পাল।


শখের হাঁড়ি নিয়ে জাপানে | প্রথম আলো


তিনি বললেন- ‘এবার তো মেলা হচ্ছে না। আপনাদের ছবি তোলার মতো শখের হাঁড়ি বাইরে নেই। আপনারা ফিরে যান। যে শখের হাঁড়ি আছে, সেগুলো বস্তায় ভরে তুলে রেখেছি। বাকিগুলো কেবল তৈরি হলো, শুকায় নি, তাই রঙও করা হয়নি।’

এমন কথায় এক পা-দু-পা করে বাড়ির ভেতরে ডাকলেন সুশান্ত পাল। বাড়ির ভেতরে দেখা যায় উঠানে বেশ কিছু শখের হাঁড়ি রৌদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। তবে নেই কাজের ব্যস্ততা। যদিও অন্য বছরগুলোতে বৈশাখের কিছুদিন আগে দম ফেলার সময় থাকে না সুশান্ত পরিবারের। সুশান্ত পাল জানান, ভাই-ভাতিজি, ছেলে- ছেলের স্ত্রী নাতি-নাতনি সবাই মিলে কাজ করি। তাই মেলার সময় সবাই কাজে লেগে যায়। এ বছর মেলাও নেই, তাই কাজও নেই।


গ্রামের উৎসব-অনুষ্ঠানকে রঙিন করে তোলে শখের হাঁড়ি


এক কথার উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মৃতশিল্পের ‘শখের হাঁড়ি’ এখনও বহুদিন থাকবে। আমার পরেও দুই প্রজন্ম রেখে যাব। তারা এই শখের হাঁড়িকে বহুদূর নিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, প্রতিবছর বৈশাখী মেলা, লোক কারুশিল্প মেলা, সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোকমেলায় অংশ নিই। এছাড়া শুধু বৈশাখকে কেন্দ্র করে পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে মেলা হয়। সেই মেলাগুলোতে শখের হাঁড়ির স্টল থাকে। মেলায় শখের হাঁড়ি বিক্রি করেই জীবিকা চলে আমাদের। গত বছর, এই বছর মিলে দুই বার হচ্ছে না মেলা। এতে করে ৫ লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প মেলায় মাল বিক্রি হয়নি। পড়ে আছে শখের হাঁড়ি সেখানে। কিন্তু এবারও হলো না মেলা। মেলা হবে না। ছেলে শখের হাঁড়ির কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। হাঁড়িটার দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু সুশান্ত সে দামে হাঁড়িটা বেচতে রাজি নন।

তিনি জানান, ছয় মাস আগে শখের হাঁড়িটি তৈরি করেছিলাম। হাঁড়িটা তৈরি ও রঙ করতে ১২ দিন লেগেছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করা হাঁড়িটা বিক্রি করিনি। বাড়িতে রেখে দিয়েছি। সেই হাঁড়িগুলো বস্তায়, পলিথিন ও খবরের কাগজে জড়িয়ে রেখেছি। যেনো নষ্ট না হয়।


Shokher Hari - শখের হাঁড়ি - Photos | Facebook


সরেজমিনে রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুরে সুশান্ত পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে হাড়ি, রুটি তৈরির তাওয়া, ঢাকুন, কলস তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো স্থানীয় ভাবে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বসন্তপুর গ্রামের অনেকেই এখন পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কিন্তু সুশান্ত পাল বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেননি। তাঁর বয়স প্রায় ৬১ বছর। এখনো স্ত্রী মমতা রানী পাল, দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল, এক মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল এবং দুই ছেলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী শখের হাঁড়ির কারুশিল্পী। তার ভাই সন্তোষ কুমার পাল ও ভাতিজা সুকেশ কুমার পালও রয়ে গেছেন পুরোনো পেশায়। পরিবারের সবাই মিলে সারা দেশে মেলা করে বেড়ান। এবার সেই মেলা নেই।

স/আ