বলিউড বাদশাহর স্বপ্নের উত্থান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

লিউড বাদশাহ বলা হয়ে থাকে তাকে। শুধু যে অভিনয় দিয়েই শ্রেষ্ঠ হয়েছেন তা নয়। ধনসম্পদের দিক থেকেও সত্যিকারের রাজা-বাদশাহর থেকে শাহরুখ খান কম কিছু নন। আজ এ তারকার জন্মদিন। এ উপলক্ষে শাহরুখের সম্পদ আছে কী পরিমাণ সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে যে কারও চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠবে। কারণ হিসাব ছাড়া সম্পদের মালিক শাহরুখ খান

যেভাবে ধনাঢ্য

২০১৪ সালের জরিপ সংস্থা ওয়েলথ এক্সের পরিচালিত বিশ্বের সেরা ধনী অভিনেতাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শাহরুখ খান। আর ২০১৭ সালে তিনি ছিলেন তৃতীয় অবস্থানে। প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সম্পদের মালিক তিনি। আর এ অর্থ তিনি কেবল অভিনয়ের কারণে উপার্জন করেননি। অভিনয় ছাড়াও আরও ৯টি উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন শাহরুখ। নায়ক থেকে প্রযোজক, অতঃপর পরিবেশক। আবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ। কোটি কোটি রুপির ব্যবসা কিং খানের এই কেকেআর-এর মাধ্যমে।

আর বিজ্ঞাপনের বাজারে একক রাজত্ব শাহরুখ খানের। সেটা দিন দিন আরও বাড়ছেই। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের শতকরা ছয় ভাগ শেয়ার তার একাই। নকিয়া, পেপসি, ট্যাগ হিউয়ের, হিউন্দাই, ডিস টিভি, ডে’কর, নেরোলাক, লাক্সের মতো আরও অসংখ্য পণ্যের মডেল শাহরুখ খান। প্রতিবছর টিভি বিজ্ঞাপন থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় দেড়শ মিলিয়ন ডলার। ভারতের সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ড ভ্যালু তারকা শাহরুখ খান। স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রি থেকেও প্রচুর উপার্জন শাহরুখ খানের। তার চলচ্চিত্রগুলোর স্যাটেলাইট স্বত্ব চড়া দামে বিক্রি করেন তিনি। অভিনব ব্যবসায়িক কৌশল ব্যবহার করতে দেখা যায় শাহরুখকে। প্রতিবারই চলচ্চিত্র মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কৌশলে ব্যবসার গতি বাড়িয়ে চলেন শাহরুখ। বিয়ের আসরের নাচিয়ে হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। চড়া পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিয়েতে নাচেন শাহরুখ খান। আর বিয়েতে কেবল নিজের উপস্থিতির জন্য ১৫ হাজার ডলার নিয়ে থাকেন তিনি।

রাজপ্রাসাদ মান্নাত

বান্দ্রার ব্যান্ডস্ট্যান্ডের প্রায় শেষ প্রান্তে বলিউডের কিং খানের ঠিকানা। বাড়ির নাম রেখেছেন মান্নাত। একদিকে সাগরের নিঃসঙ্গতা, অন্যদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিলাসবহুল মান্নাত। কিকো গান্ধী ছিলেন মান্নাতের আগের মালিক। তখন বাড়ির নাম ছিল ‘ভিলা ভিয়েনা’। এই ভিলা ভিয়েনাকে শাহরুখ খান রাজপ্রাসাদ হিসেবে তৈরি করে নিয়েছেন। ঈদ আর জন্মদিন উপলক্ষে শাহরুখ খানকে দেখার আশায় মান্নাতের সামনে ভিড় করে থাকেন তার হাজার হাজার ভক্ত।

শাহরুখ-গৌরীর প্রেমকাহিনি

দিল্লির মেয়ে গৌরী শিবারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহরুখ খান ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর। শাহরুখ-গৌরীর ভালোবাসার গল্প ছবির কাহিনিকেও যেন হার মানায়। শুরু থেকেই নানা বাধা আসে তাদের ভালোবাসায়। কিন্তু সব চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়েছেন তারা। দুই ছেলে আরিয়ান, আবরাম ও মেয়ে সুহানাকে নিয়ে শাহরুখ-গৌরী খানের সুখের সংসার। শাহরুখ-গৌরীর পরিচয় পর্বটা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। দুজনই স্কুলে পড়তেন তখন। শাহরুখের বয়স ছিল ১৯, আর গৌরীর বয়স ১৪। একটি অনুষ্ঠানে এই জুটির প্রথম সাক্ষাৎ হয়। শাহরুখ প্রথম দেখাতেই গৌরীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। এভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর লুকিয়ে প্রেম করেছেন শাহরুখ-গৌরী। বিয়ের পর নানা খুনসুটির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে শাহরুখ-গৌরীর সংসার।

এ যেন চলমান প্রাসাদ!

শাহরুখের দ্বিতীয় বাড়ির নাম ভলভো-বি৯ আর ভ্যান। বাড়ির আদলে এটি হলো গাড়ি। চলমান বলেই হয়তো তার কোনো ঠিকানা নেই। ফিল্মি দুনিয়ায় একে বলা হয় ভ্যানিটি ভ্যান। গাড়ি কাম বাড়ির চেহারাটাই একেবারে আলাদা। শাহরুখের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে চলমান বাড়িটিতে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি ঘর। একটি বেডরুম। একটি মিটিং রুম। একটি মেকআপ কাম চেঞ্জিং রুম। রয়েছে একটি টয়লেটও। চলমান এই বাড়ি লম্বায় প্রায় ১৪ মিটার। এর ভেতরে জায়গা রয়েছে ২৮০ স্কয়ার ফুট। শাহরুখের জন্য বিশেষ এই গাড়ি কাম বাড়ির ডিজাইন করছে বিখ্যাত ডিজাইনার কোম্পানি ডিসি ডিজাইন স্টুডিও। এই গাড়ি-বাড়িটির ভেতরে প্রায় ৩৬০ স্কয়ার ফুট জায়গা। ওয়াই-ফাইসহ ভেতরের প্রতিটি ঘরেই আছে অ্যাপল টেলিভিশন সেট। এ ছাড়া আরও সংযুক্ত করার কথা রয়েছে একটি বড় পর্দার স্যাটেলাইট টেলিভিশনও।

বলিউড বাদশার গোপন যত কষ্ট

বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান ক্যারিয়ারের সাফল্য লুফে নিয়েছেন অনেক আগেই। পুরো বিশ্বেই নিজের পরিচিতি গড়ে নিয়েছেন তিনি। অসংখ্য ভক্তের হৃদয়ে পাকাপোক্ত অবস্থানও আছে তার। কিন্তু একটি জায়গাতেই তার হৃদয়টা খালি রয়ে গেছে, মনে জমে আছে নিদারুণ কষ্ট। তার এই সাফল্যে দেখে সবচাইতে বেশি খুশি হতেন যারা, তারাই আজ বেঁচে নেই। আর তারা হলেন শাহরুখের বাবা-মা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন শাহরুখ খান আর তার বলিউড অভিষেকের মাত্র দুই বছর আগে ১৯৯০ সালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান মা। মরণঘাতী ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন শাহরুখের বাবা তাজ মোহাম্মদ খান। কৈশোরে বাবাকে হারানোর ১০ বছরের মাথায় ১৯৯০ সালে মা লতিফ ফাতিমাকে হারাতে হয় শাহরুখকে। তখন বলিউডে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছিলেন শাহরুখ। মায়ের মৃত্যুর এক বছর পর ১৯৯১ সালে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা গৌরী খানকে বিয়ে করেন শাহরুখ।

প্রেমের অজানা অধ্যায়

১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে ছবির সহ-অভিনেত্রী কাজলের সঙ্গে শাহরুখের সখ্যের খবরে প্রথম অশান্তির ঢেউ উঠেছিল শাহরুখের সংসারে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে শাহরুখের সঙ্গে ডন ও ডন ২ ছবির সহ-অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার দহরম-মহরমের বিষয়টি। ২০১১ সালে মুক্তি পায় শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা জুটির ব্যবসাসফল ছবি ডন ২। ছবিটিতে অভিনয়ের সময় সখ্য গড়ে ওঠে এ দুই তারকার। পরে তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। প্রায় নিয়মিতই তাদের ঘিরে মুখরোচক সব খবর প্রকাশিত হয়েছে। দিন দিন শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, জুটি বেঁধে পণ্যের দূতিয়ালি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ শুরু করেন শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কা। স্ত্রী গৌরীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দহরম-মহরম চালিয়ে যান ‘বলিউড বাদশাহ’। গৌরীর কঠোর অবস্থানের কারণে ধীরে ধীরে শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কার মধ্যে দেয়াল তৈরি হয়। একে অন্যকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন তারা।

সূত্র: আমাদেরসময়