বর্ষিয়ান নেতা সুধাসিন্ধু খীসার মৃত্যুতে পার্বত্যবাসী শোকাহত

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি:

তিন পার্বত্য জেলা পার্বত্য জেলার জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস-এম এন লারমা)  সাবেক সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শ্রী সুধাসিন্ধু খীসা বার্ধক্যজনিত গতকাল মঙ্গলবার খাগড়াছড়িস্থ নিজ বাড়িতে রাত ১২টায়  মৃত্যুবরণ করেন।

আজ (বুধবার) দুপুরে জুম্ম জাতির নেতার মরদেহ খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার ২নং মুবাছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খুলারামপাড়ার বাড়ির পারিবারিক শ্মশানে সৎকার সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুতে তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পিসিজেএসএস এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা শ্রী সুধাসিন্দু খীসা সম্পর্কে বলেন, তাঁর মৃত্যুতে আমাদের কাছে ভীষণ এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তিনি আজীবন সংগ্রামী, ত্যাগী, বিপ্লবী। নিঃস্বার্থ ভাবে দুঃখী মেহনতি মানুষদের জন্যে জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন। শান্তিবাহিনীর আমলেও অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি কখনো অন্যায়কারীকে প্রশয় দেয়নি,স্বজনপ্রীতিও করেন নি। সদা সৎ পথে থেকে প্রিয় জুম্ম জাতির মুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। এমন প্রতিভাবান নেতা, রাজনীতিবিদ, সংগ্রামী, ত্যাগী নেতা ও নক্ষত্র আজ পার্বত্যবাসী হারালো এই মানুষকে। নিজের পরিবার পরিজনসহ জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার চেয়ে তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী ও নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।

উল্লেখ্যে যে, তিনি ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী মেধাবী ছাত্রনেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালে তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের রাজনীতির একজন নেতা হয়ে উঠেন। প্রয়াত সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম.এন.লারমা)-র সঙ্গে মিলে গঠন করেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)’। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটির সাথে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সংলাপেও সুধাসিন্ধু খীসা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জুম্মজাতির পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। সত্তরোর্ধ্ব বয়সী সুধাসিন্ধু খীসা মৃত্যুর সময়ে নেতা স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলে ও অনেক আত্মীয়স্বজনসহ গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পার্বত্য জুম্মজনগণের মহান নেতার মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠনের নেতৃবৃন্দগণ শোকাহত।