বর্ষায় রোপণ হবে এক কোটি গাছ, চারা দেবে সরকার

চলতি বর্ষা মৌসুমে এক কোটি গাছ রোপণ করবে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই ফলদ, বনজ ও ঔষুধিসহ বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা বিতরণের কর্মসূচি শুরু হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উদ্বোধনের দিনই সারাদেশে এক কোটি চারা বিতরণের পরিকল্পনা ছিল বন বিভাগের। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যায়ক্রমে চারা বিতরণ করা হবে। এছাড়া নিয়মিত কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর আরও ৮ কোটি ২৫ লাখ গাছের চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

একই সঙ্গে চলতি বর্ষা মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে এক লাখ গাছের চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমাদের এক কোটি গাছ লাগানোর কর্মসূচি আছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এটা আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছি। এই কর্মসূচি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সময় চেয়েছি। তিনি যেদিন সময় দেবেন, সেদিন থেকেই আমরা গাছের চারা বিতরণ শুরু করব।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকের অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসকে এই গাছ লাগানো কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। তাদের রোপণের জন্য এক কোটি গাছের চারা আমরা দেব। বন বিভাগ এই গাছের চারা সরবরাহ করবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি আছে। করোনা সংক্রমণকাল চললেও সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণে আশা করছি আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।’

বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চলতি বর্ষা মৌসুমে আমরা এক কোটি চারা রোপণ করব। আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন এবং একই দিন সারাদেশে সব চারা আমরা বিতরণ করব। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের সেই পরিকল্পনা তো এখন বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘একটি উপজেলায় ২০ হাজার ৩০০টির মতো চারা বিতরণ করা হবে। আমরা তো এখন বিপুলসংখ্যক মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করতে পারব না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয়তো একদিনে ২০-৩০ জনের বেশি লোককে চারা দিতে পারব না।’

চারা বিতরণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি আছে। এ কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সংস্থার লোকজন সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই কমিটিই ঠিক করবে কাদের চারা বিতরণ করা হবে। কমিটি ইতিমধ্যে তালিকা করে রেডি করে রেখেছে কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের চারা দেয়া হবে। সবকিছু আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘গাছের চারা আমরা দিয়ে দেব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা ব্যক্তি তার জায়গায় গাছটা রোপণ করবেন। এতে গাছটার প্রতি তার মমতা থাকবে, তিনি যত্ন নেবেন। আমরা গিয়ে রোপণ করলে হয়তো তার সেই মমতাটা কাজ নাও করতে পারে।’

এই এক কোটিসহ এ বছর বন অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ গাছ রোপণের উদ্যোগ রয়েছে জানিয়ে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, ‘টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে এই গাছ রোপণের কর্মসূচি রয়েছে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা নির্দিষ্টসংখ্যক গাছ আমরা লাগাব এবার। আমরা এবার বর্ষায় আমাদের সব দফতর ও সংস্থাকে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা কমপক্ষে এক লাখ গাছ লাগাব।’

গত ১৫ জুন বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের বৃক্ষরোপণ করতে হবে। আমাদের যেখানে যত নেতাকর্মী আছে আমাদের মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সব সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি সদস্য তিনটি করে গাছ লাগাবে। সেটা তার নিজের জায়গায় হোক, রাস্তার পাশে হলেও।’