বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলায় প্রেমিকাকে হত্যা, দেখে ফেলায় বোনকেও হত্যা

রংপুরের শহরের মধ্য গণেশপুর এলাকায় দুই বোন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মাহফুজুর রহমান রিফাত। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রোববার রাত ৮টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

তিনি বলেন, মধ্য গণেশপুর এলাকার মোকছেদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম ও মমিনুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া। তারা সম্পর্কে চাচাতো বোন। রিফাত নগরীর মধ্য বাবুখাঁ এলাকার এমদাদুল ইসলামের ছেলে।
রিফাতের সঙ্গে মীমের দীর্ঘদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও সম্প্রতি দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রিফাত দেখা করতে চাইলে মীম তাকে চাচার বাসায় আসতে বলেন। ওই দিন বিকেলে রিফাত তার বন্ধু আরিফুল ইসলামের বাড়ি লাহিড়ীরহাটে যান এবং তার সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড খুলে আরিফুলের ফোন ও অন্য একটি সিমকার্ড নিয়ে মীমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে আনতে মমিনুল ইসলাম মেয়ে জান্নাতুল মাওয়াকে রেখে শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামে যান। জান্নাতুল মাওয়া তার চাচাতো বোন সুমাইয়াকে রাতে একসঙ্গে থাকার জন্য নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাত ওই রাতে মীমের বাড়িতে যান। এ সময় তাদের মধ্যে শারীরিক মেলামেশা হয়।

মীম তার ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে কেন অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রিফাত উত্তেজিত হয়ে তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।

পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জান্নাতুল মাওয়া টের পেলে তাকেও হত্যার পর আয়নার ভাঙা কাচ দিয়ে গলায় আঘাত করে মেঝেতে ফেলে রাখেন। পরে ওই রাতেই বন্ধু আরিফুলের বাড়িতে গিয়ে ফোন ও সিমকার্ড পরিবর্তন করে সেখানে রাতযাপন শেষে পরদিন বাড়িতে যান রিফাত। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুমাইয়ার মা ঘরের দরজা খুলে ভেতরে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় নিহত জান্নাতুল মাওয়ার বাবা মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রিফাতকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরিফুলের কাছ থেকে ভিকটিমের ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে রোববার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

 

সূত্রঃ যুগান্তর