মঙ্গলবার , ১৮ জুলাই ২০১৭ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে পুলিশের ভাষ্যই বিশ্বাস করবে মিডিয়া?

Paris
জুলাই ১৮, ২০১৭ ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে খুলনায় কথিত বন্দুক যুদ্ধে সোমবার দুজন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের মধ্যে একজন হত্যা মামলার আসামি এবং অপরজন তার সহযোগী ছিল বলে পুলিশের অভিযোগ।

পুলিশ বলছে এই দুইজনকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে যেয়ে সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে, বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় তারা। যদিও বাংলাদেশে এই রকম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার খবর মোটেই নতুন নয়।

এসব ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের দেওয়া ভাষ্যের বাইরে তেমন কোনও বাড়তি তথ্য পাওয়া যায় না। তা ছাড়া পুলিশের ভাষ্যও প্রায় সব ক্ষেত্রেই হয় হুবুহু এক ধরনের – তাই জনমনে বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ তৈরি করে এই ঘটনাগুলো।

কিন্তু দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকেও কি পুলিশের দেওয়া ভাষ্যই অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করতে হবে? এই ধরণের কথিত ‘বন্দুক যুদ্ধের’ ঘটনা তারা কীভাবে কভার করতে পারে?

খুলনা ঘটনার ক্ষেত্রেই যেমন, জেলার সদর থানার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেছেন রবিবার গভীর রাতে পুলিশের ১৫/২০ জনের একটি দল আটক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে বের হন।

পুলিশের দাবি এক পর্যায়ে শহরের প্রভাতী বিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে পড়েন তারা। এরপর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হন অভিযুক্ত দুজন।

অবিকল এই বিবরণের মতোই, পুলিশের হেফাজতে থাকা গ্রেপ্তার আসামিকে নিয়ে এভাবে অস্ত্র উদ্ধার বা অভিযানে বেরোনোর পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনার কথা বাংলাদেশে আখছার শোনা যায়।

কিন্তু আসলেই সেখানে কোনও বন্দুক যুদ্ধ হয়েছিল কিনা সেটা যাচাই করার সুযোগ বেশি থাকে না। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যের ভিত্তিতেই বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যমকে প্রতিবেদন করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশে একটি অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনের সংবাদ বিভাগের প্রধান হারুন উর রশীদ কিন্তু মনে করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে বন্দুক যুদ্ধের সম্পর্কে আরো তথ্য বের করা সম্ভব।

তিনি বলছিলেন, “একটা বন্দুকযুদ্ধের তো অনেক টেকনিক্যাল দিকও থাকে। মানে গুলিটা কোন দিক থেকে লাগল, কীভাবে লাগল এই সব। সামনের দিক থেকে লাগলে বোঝা যাবে মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগেছে – শরীরের পেছনের দিকে লাগলে বোঝা যাবে পালানোর সময় লেগে থাকতে পারে।”

“কাজেই সংবাদমাধ্যম যদি নিহতের অটোপ্সি রিপোর্ট বা ময়না তদন্তের রিপোর্ট ইত্যাদি খতিয়ে দেখতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় এখানেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অবকাশ আছে।”

অনেক সংবাদমাধ্যম বন্দুকযুদ্ধ শব্দের আগে কথিত বা কোট-আনকোট ব্যবহার করছে। এটা করে অবশ্য এক অর্থে আদৌ বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে কিনা সেটার উপরই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হচ্ছে।

আসলে একজন পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় কীভাবে তার কাছে অস্ত্র আসতে পারে বা অভিযুক্তকে সাথে নিয়ে কেন অস্ত্রের খোঁজে যেতে হবে কিংবা দলের একজন ধরা পড়েছে এটা জানার পরেও সহযোগীরা গা ঢাকা না দিয়ে কেন পুরনো আস্তানায় থাকবে – এসব নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন জনমনে।

আর এসব কারণেই একজন পাঠক,দর্শক বা শ্রোতার কাছে বন্দুকযুদ্ধের খবর গুলো এখন অবিশ্বাস্য এবং একপেশে খবর মনে হয়।

ঢাকার রাস্তায় এক পথচারী বন্দুকযুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিবিসিকে বলছিলেন, “এটা আদৌ বিশ্বাস করা যায় না। যে লোকটা কাস্টডিতে আছে সে কীভাবে লড়াই করবে, তাও আবার বন্দুক নিয়ে?”

রাজধানীর আরও এক বাসিন্দার কথায়, “পত্রিকায় বন্দুকযুদ্ধের যে সব গল্প বেরোয় আমি তো সেগুলো পড়িই না। কারণ আমি মনে করি ওগুলো গল্পই। আপনিই বলুন না, কেন অ্যারেস্ট হওয়া একজন লোককে নিয়ে পুলিশ অস্ত্র খুঁজতে যাবে?”

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যের বাইরে সাংবাদিকরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেন সেসব অনেক সময় প্রচার বা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।

আমার সাথে একাধিক প্রতিবেদকের কথা হয়েছে যারা বেশ কিছু বন্দুকযুদ্ধের অনুসন্ধান করেছেন কিন্তু নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাহলে সীমাবদ্ধতাটা কোথায়?

হারুন উর রশীদ বলছিলেন এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো কিছুটা সেল্ফ সেন্সরশিপ করে থাকে। মানুষের কাছে খবরের অপর পিঠটা দেখাতে না পারাটাও এক রকম ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন তিনি।

তার কথায়, “প্রতিটা বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার রিপোর্ট করার ক্ষেত্রেও সংবাদমাধ্যমের একটা দায়িত্ব আছে। কোট-আনকোট করেই যদি আমরা দায় সারি, তাহলে তো ফলো-আপ রিপোর্ট করার সময়ও আমাদের ভাবতে হবে সেটা কি এবার তুলে নিতে পারব না কি বজায় রেখে যাব?”

“আসলে এখানে সংবাদমাধ্যমের ব্যর্থতাই আছে আমি বলব। মিডিয়া এখানে বিনিয়োগ করতে চায় না, বরং নিজেদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করে চলে। আর তাদের ওপর যে চাপ থাকে সেটাও তো অস্বীকার করা যায় না।

“যারা বলেন ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা আছে – এবং এটা বলে সেগুলোকে জাস্টিফাই করতে চেষ্টা করেন, তারাই যখন দেশে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন এবং দেশের নীতি-নির্ধারক হন, সেটাই তো সবচেয়ে বড় চাপ”, বলছিলেন মি রশীদ।

এদিকে বন্দুকযুদ্ধের খবর নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন বা বিতর্ক, সেই বিষয়ে জানতে চেয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তাদের কেউই। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - অপরাধ ও দুর্নীতি