বছর না ঘুরতেই নদীগর্ভে বিলীন বেড়িবাঁধ, ঝুঁকিতে হাজারো মানুষ

পিরোজপুরর ইন্দুরকানী উপজেলার নদী তীরবর্তী ২০ সহস্রাধিক মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকি নিয়েই উপকূলীয় এলাকায় বাস করেন। খাল এবং নদী বেষ্টিত এ উপকূলীয় জনপদের জনসাধারণের ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস সহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিত্য দিনের সঙ্গী। এভাবেই যুগ যুগ ধরে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে এ জনপদের মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। জলবায়ূ পরির্তনের বিরূপ প্রভাব উপজেলাবাসীকে এক রকম আষ্টেপিষ্ঠে ধরেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ঝূকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রায় কেন্দ্রও নির্মাণ হয়নি এখনও। নেই টেকসঁই বেড়িবাঁধও। যার কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এ উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্নিঝড় সিডরের তান্ডবলীলা আর ভয়াবহতার কথা আজও স্মরণে আছে উপজেলাবাসীর। সেসময় ৬৫ জনের প্রাণহানীসহ অসংখ্য লোক আহত হয়ে ছিল। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়াও ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার জলোচ্ছ্বাসে পানগুছি, কচা ও বলেশ্বর নদের বেঁড়িবাঁধ সহ গোটা উপজেলার কাচা পাকা অসংখ্য রাস্তা ঘাট ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ দুটি দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপজেলাবাসী।

৯২.৫৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এ উপজেলায় মোট ৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সিডর ও আইলার পরে এ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ গুলোর দীর্ঘ বছর পর কিছুঅংশে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। উপজেলার টগড়া, খোলপটুয়া, পূর্ব চন্ডিপুর, পূর্ব চরবলেশ্বর, কালাইয়া ও সাইদখালী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোর বেড়িবাঁধ গত এক থেকে দেড় বছর আগে নির্মাণ করা হলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে তা কচা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বিভিন্ন সময়ে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্মচাপ এর সাথে টানা বর্ষণ আর জোয়ারে নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ। বছর না ঘুরতেই বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার এসব বাসিন্দাদের।

আর বেঁড়িবাধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারেই নদ নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়ে যায় এর নিম্নাঞ্চল। এর কারনে ফসলহানীসহ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয় উপজেলাবাসীকে। তাছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে কচা ও বলেশ্বর নদ রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। তবে এর মধ্যে সবচেয় বেশি দুর্যোগ ঝুঁকিতে আছে টগড়া, খোলপটুয়া, পূর্ব চন্ডিপুর, পূর্ব চরবলেশ্বর, কালাইয়া ও সাইদখালী চাড়াখালী গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত শত শত পরিবার। পাশাপাশি সাইদখালির মাঝের চর, পাড়েরহাট আবাসন ও কলারন জাপানি ব্যারাকে বসবাসরত বাসিন্দারাও থাকেন আতংকে। নদীর মাঝে গড়ে ওঠা সাইদখালী চরের চারদিকে কোন বেঁড়িবাধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারে মাঝারী জলোচ্ছাসে এর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়।

উপজেলাবাসীর দাবী, নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অচিরেই নদী-ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং টেকসঁই বাঁধ নির্মান করার।

টগড়া গ্রামের কচা নদীর পাড়ে বসবাসরত জেলে আ: হক, আনোয়ার হোসেন ফরাজী ও আ: খালেক জানান, নদীর তুফানের শব্দে তাদের রাতে ঘুম হয়না। বেঁড়িবাধ না থাকায় সবসময় আতংকের মধ্য দিন কাটাতে হয় তাদের। কখন জানি বড় দুর্যোগ এসে সবকিছু ভাসিয় নিয়ে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ জানান, বিভিন্ন দূর্যোগে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসঁই বাঁধ নির্মানের ব্যাপারে পানি সম্পদ প্রতি মন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান সহ বিভিন্ন সময়ে জোয়ারের পানির চাপে বিভিন্ন গ্রামের বাঁধের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।বিভিন্ন বাধ ভেঙে গেছে। এসব বাঁধ সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে বাঁধ গুলো পূন:নির্মাণ করা হবে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ