বছরের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে তিনগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের অন্যতম আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্য আদা। বছরে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আদার চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার টন। বাকি দেড় লাখ টনেরও বেশি আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আদা আসে চীন থেকে। তবে বিশ্ববাজারে বুকিং দরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে দেশের আমদানিকারকেরা পণ্যটির আমদানিতে লাগাম টেনেছেন। ফলে বাজারে এক ধনের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে আদার দাম বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। গত বছরের একই সময়ে কেজিপ্রতি এ দাম ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে তিনগুণেরও বেশি দাম বেড়েছে পণ্যটির। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি আদা কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কম বা বেশি। এতে দারুণ বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষত আদার চড়া দামে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। আসন্ন ঈদুল আজহার আগে বাজারে আদার দামের এ উত্তাপ শিথিল না হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা।

শুধু আদা নয়, বাজারে দাম বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনেরও। এসব কাঁচাপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিকে ঈদুল আজহা সামনে রেখে বাড়তি চাহিদার অজুহাতে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিতে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন ক্রেতারা।

মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে এনামুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। আদা-পেঁয়াজ-রসুনের ক্ষেত্রেও তা-ই করছেন। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ইচ্ছা করেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ বা যথাযথ বাজার মনিটরিং না থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারের এ অবস্থা।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে বাজারে সব ধরনের মসলার চাহিদা বাড়ে। সে সুযোগ কাজে লাগাতে এবার আগেভাগেই মসলার দাম নিয়ে সিন্ডিকেট হচ্ছে। যেন ঈদের আগমুহূর্তে নতুন করে দাম বাড়িয়ে কোনো সমালোচনা তৈরি না হয়, সেজন্য আগেভাগে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এখন সব পণ্যের ব্যবসায়ীরাই সুযোগ বুঝে এমনটি করছেন।

দেশে ঈদুল আজহায় আদা, রসুন ও অন্যান্য মসলার চাহিদা বেশি থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনা আদার দাম বাড়ার কারণ আমদানি কমে যাওয়া। সরবরাহ ঘাটতির কারণে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার কারণে।

শ্যামবাজারের আড়তমালিক মো. মাজেদ বলেন, আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। ফলে চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ রেখেছেন অনেক ব্যবসায়ী। কারণ, ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়তে চান না।

তবে তার মতে, খুচরা বাজারে আদার দাম এতটা বাড়ার কথা নয়। তিনি মনে করেন, খুচরা বিক্রেতারাও সুযোগ বুঝে ক্রেতাদের কাছ থেকে কিছুটা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি কেজির দাম দাঁড়াচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা।

মধ্যবাড্ডার ওই কাঁচাবাজার ছাড়াও রাজধানীর অন্য অনেক বাজারের মুদি দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এ দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। এসব কারণেই দাম বাড়ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আদা-পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে রসুনেরও। আমদানি করা চীনা রসুন মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পযন্ত বেড়েছে।