রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে উদ্যোক্তাদের মাঝে জায়গা বরাদ্দ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে সারাদেশে এক লক্ষ বৃক্ষের চারা রোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন, শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য স্পেস বরাদ্দপত্র হস্তান্তর এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতায় কনভেনশন হল স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শুক্রবার সকালে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। উদ্বোধক ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে পাকিস্তানের স্বাধীনতা বিরোধীরা। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ভেবেছিলো এই দেশে আর কখনো জয় বাংলা ধ্বনি উচ্চারিত হবে না। কিন্তু তাদের সেই ভ্রান্ত ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

মেয়র আরো বলেন, ক্ষমতায় থেকে বিএনপি দুঃশাসন করেছে। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন করেছে। দেশের সর্বক্ষেত্রে এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান। অসংখ্য মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন প্রতি সপ্তাহে একনেক সভা হচ্ছে, বড় বড় প্রকল্প পাশ হচ্ছে, যা আগে কখনো দেখিনি, কল্পনাতেও ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শিক্ষানগরী রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। ২০১১ সালে রাজশাহীতে মাদ্রাসা মাঠের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী হাইটেক পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখানকার তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকুরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকুরি দিবে। আগামী দিনে আইসিটি হবে দেশের আয়ের অন্যতম বৃহৎ খাত।

মেয়র আরো বলেন, করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে জন্য করোনার প্রভাব আমরা সেইভাবে বুঝতে পারিনি। করোনার মধ্যেও রপ্তানি আয় ও রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, আগস্ট শোকের মাস। এই মাসেই আমরা হারিয়েছি জাতির পিতাকে। ১৫ আগস্টের কালো রাতে কতিপয় বিপথগামীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই শোকের মাসেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই আইসিটি বিভাগের অন্যতম লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রাজশাহী মেডিকেল, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীতে এক জনসভায় এই অঞ্চলের জন্য একটি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর উদ্বোধন করে রাজশাহীবাসীর স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীকে একটি প্রযুক্তি নগরী হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে।

প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের একটি ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে রাজশাহীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, মহিলা আসন-৩৭ এর সাংসদ আদিবা আনজুম মিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী’ প্রকল্পের পরিচালক (উপসচিব) জনাব এ. কে. এ. এম ফজলুল হক, রাসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীতে সদ্য নির্মিত শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট এই ভবনে স্টার্ট-আপদের জন্য বিনামূল্যে স্পেস রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই এই ইনকিউবেশন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরাদ্দপত্র প্রদান করা হলো। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব হাই-টেক পার্ক-এ কনভেনশন হল স্থাপন করবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর পক্ষে স্বাক্ষর করেন পরিচালক (যুগ্মসচিব) এ এন এম সফিকুল ইসলাম এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সচিব আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ।

উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক-এ ১০ তলা বিশিষ্ট জয় সিলিকন টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পদ্মাপাড়ে মনোরম পরিবেশে প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ স্থাপনের কাজ শেষ হলে প্রায় ১৪,০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর আওতায় সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। রাজশাহীতে প্রায় ৩১ একর জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক গড়ে উঠছে। হাই-টেক পার্কগুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ এর চাহিদা পূরণে রাজশাহী ও নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে এবং দেশের আরো ১০টি স্থানে চলমান আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় ট্রেনিং কাম ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে।