রবিবার , ১৪ জুলাই ২০২৪ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বগুড়ায় অন্যের সন্তানকে নিজের দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি, দুদকে মামলা

Paris
জুলাই ১৪, ২০২৪ ৬:১০ অপরাহ্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি:
নিজের কোন পুত্র সন্তান নেই, আছে শুধু কন্যা সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেয়া সহজ। তাই এলাকার কয়েকজনের সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে আখ্যা ও প্রত্যয়ন দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেয়। এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সোনাতলার রাণীরপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক উপজেলা কমান্ডার রফিকুল ইসলামের (৭২) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাহিদ হাসান ওই মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধান আসামি করে তার কথিত ‘তিন সন্তানের’ বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছেন। তবে ভুয়া সন্তান হিসেবে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় তিনজনকে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে দুদক বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম সদর ইউনিয়নের রাণীরপাড়া গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। মুক্তিযোদ্ধার দুই মেয়ে রাশেদা আকতার ও মোরশেদা আকতার চাকরি পাওয়ায় উপযুক্ত না থাকায় বিয়ে হয়ে যায়। এদিকে ছেলে সন্তান না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল একই এলাকার কয়েকজনের শিক্ষিত ছেলেদের নিজের সন্তান হিসেবে কাগজ কলমে দেখায়। এর তাদের পরিবারের কাছ থেকে ইসলাম মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে সন্তানের তালিকায় সাত জনের নাম পাওয়া গেলেও ওই মুক্তিযোদ্ধা তার সনদপত্র ব্যবহার করে আরও অনেককে সরকারি চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের বানানো সন্তানেরা হলেন, আহসান হাবিব ও জিয়াউর রহমান। তাদের প্রকৃত বাবা সোনাতলার দক্ষিণ রাণীরপাড়ার জাফর আলী। আহসান হাবিব মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে পুলিশে চাকরি পান। গাইবান্ধা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সে নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। মামলার পর তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। জিয়াউর রহমানকে সারের ডিলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ করে দেন। তার অন্যান্য সন্তানরা হলেন, বেলাল হোসেন, ফরহাদ হোসেন, সালেক উদ্দিন, রাকিব হাসান এবং মৌসুমী আকতার।

মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সন্তানদের মধ্যে বেলাল হোসেন উপজেলার রাণীরপাড়ার মৃত জবেদ আলীর ছেলে। তাকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০০১ সালে পুলিশে চাকরির পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি ডিএমপির ট্রাফিক জোনের এটিএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। মামলার পর সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ফরহাদ হোসেন একই গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে। তাকে ফায়ার সার্ভিসে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। মামলার পর তাকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ফায়ার সার্ভিস থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে সালেক উদ্দিন গত ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল হন। পার্শ্ববর্তী জুমারবাড়ি এলাকার মোমিনুল ইসলামের ছেলে রাকিব হাসান সমাজসেবা অধিদফতরে চাকরি পেয়েছেন। তার ভাই শহিদুল ইসলামের মেয়ে মৌসুমী আকতারকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ওই মুক্তিযোদ্ধা রফিকুলের অন্যায় ও অপকর্ম রুখতে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা গত ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তারা একই উপজেলার রাণীরপাড়ার কেল্লাগাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ও নিমের পাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার।

তাদের অভিযোগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম একজন প্রতারক। তার এক স্ত্রী ও দুজন কন্যাসন্তান রয়েছে। অথচ তিনি সাত জনকে সন্তান সাজিয়ে তাদের কোটায় চাকরি পেতে সহায়তা করেছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধারা এসব অপরাধে জড়িত রফিকুল ইসলাম ও কোটায় চাকরি পাওয়া তার কথিত সন্তানদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দুর্বল। এ সুযোগে চতুর রফিকুল ইসলাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ এই ‘সাইনবোর্ড’ সামনে রেখে নানা অপকর্মে জড়িত হয়। এর সুযোগে বেশ কয়েকজনকে নিজের সন্তান সাজিয়ে কোটায় সরকারি চাকরি পেতে সহযোগিতা করেন। এবং বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেয়।

এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক বগুড়া কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক জাহিদ হাসান গত ৩০ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও তার তিন ভুয়া সন্তান বেলাল হোসেন, ফরহাদ হোসেন ও আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেন। মুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকরি নিয়ে বেলাল হোসেন এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ১৮ হাজার টাকা বেশি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া অন্য দুটি মামলায় আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ৩২ লাখ ৫০ হাজার ও ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নয় লাখ ৬৭ হাজার টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেনের বাবা জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, তার সন্তান জন্মের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম তাকে দত্তক নেন। লালন পালন ও লেখাপড়া করিয়ে তাকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ‘এতে দোষের কিছু দেখছি না’।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জানান, তার দুটি মেয়ে রয়েছে। এরপরও তিনি দুই ভাতিজা বেলাল হোসেন ও ফরহাদ হোসেন এবং ভাগ্নে আহসান হাবিবকে সন্তান হিসেবে লালন পালন করেছেন। তিনি তাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। অন্য আর কাউকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করে কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। কতিপয় ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তবে দুদকের ওইসব মামলা আদালতে মোকাবিলা করবেন বলে জানান ওই অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা।

এ প্রসঙ্গে দুদক বগুড়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান দেখিয়ে কোটায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এমন অভিযোগের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও তিন কথিত সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। অন্য অভিযোগগুলোর ব্যাপারেও তদন্ত চলছে।’ সত্যতা প্রমানেই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর