ফেব্রুয়ারিতে রেল-নৌ-সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ৫২২ প্রাণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

ফেব্রয়ারি মাসে রেল, নৌ-পথ ও সড়ক পথে সারাদেশে ৫০৭টি দুর্ঘটনায় ৫২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭৯৫ জন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৭টি। এতে মারা গেছেন ৪৬৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৬১ জন।

একই সময়ে রেলপথে ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন সাতজন। অদ্যদিকে নৌ-পথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ১৫ জন।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী- ফেব্রুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৭২ জন চালক, ৯৩ জন পথচারী, ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬২ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, পাঁচজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৪ জন নারী, ৬৭ জন শিশু, একজন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী ও একজন প্রকৌশলী ও ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

তাদের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন পুলিশ সদস্য, দুজন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৮৬ জন পথচারী, ৫২ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ৫০ জন শিক্ষার্থী, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১ জন শিক্ষক, একজন প্রকৌশলী, একজন আইনজীবী ও ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৫৯৮টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বাস, ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ১৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছে, ৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ২৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭ ফেব্রুয়ারি। এ দিনে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ দিনে আটটি সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে যাত্রীকল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনা বেশি ঘটার বিষয়ে তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। সেগুলো হলো- বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাটবাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশানির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান।