ফুল-ফল-সড়কবাতির সৌন্দর্য্যে পুরো রাজশাহী নগরী যেন বিনোদনকেন্দ্র

নগরীর রাজিব চত্ত্বরে এভাবেই শোভা পাচ্ছে নানা রংয়ের হরেক রকমের ফুল

হারুন-অর-রশিদ:

রাজশাহী মহানগরীর রাস্তার ধারসহ আইল্যান্ড, সড়ক বিভাজন ও ফুটপাতে নানা রঙয়ের ফুল। ফাঁকে ফাঁকে হরেক রকমের ফল আর ওষধি গাছের চারায় সবুজ নগরীর রাস্তাগুলোর সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে বহুগুণে। সেই সাথে প্রজাপতির ডানার মত আধুনিক সড়কবাতি সবাইকে করছে বিমোহিত। দিনে হরেক রকমের ফুল-ফলের সৌরভ আর রাতে প্রজাপতির ডানায় জ¦লে ওঠা আলোর অপরূপ সৌন্দর্য্যে ৯৭ দশমিক ১৭ কিলোমিটারের রাজশাহী নগরীর পুরোটাই যেন বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে নগরী ঘুরে দেখা গেছে- পিচঢালা পাকা রাস্তার দুইধার, আইল্যান্ড ও সড়ক বিভাজনগুলোতে ঋতুভেদে নানা ফুল আর ফলগাছ শোভা পাচ্ছে। শুধু রাস্তায় নয়; গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঈদগাহসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের ওলি-গলিতেও সুরোভী ছড়াচ্ছে চোখ ধাঁধাঁনো ফুল। সবুজে ঘেরা পদ্মাপাড়ের রাজশাহী নগরীতে এসব ফুলের সুগন্ধে মোহিত হচ্ছে নগরবাসীসহ পর্যটকরা।

বর্তমানে নগরজুড়ে টসবগে লাল, হলুদ, সাদাসহ নানা রঙের মিশ্রনে বাহারী সতেজ ফুল সুবাস আর সৌরভ ছড়াচ্ছে। নগরীকে সাজিয়েছে নতুন রূপে। এ যেন নগরজুড়ে ফুলের মেলা। চিরচেনা সবুজ নগরীতে এসব ফুল এখন নজর কাড়ছে ছোট-বড় সকলের। আর এগুলো পরিচর্যায় কাজ করছে সিটি করপোরেশনের ৬০ জন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মকারি। দুটি পানির ট্রাঙ্কার ও একটি বেবি জেট নিয়ে নিয়মিত তারা ছুটছেন এসব গাছের যত্নে।

সরেজমিনে দেখা গেছে- নগরীর ভদ্রা থেকে তালাইমারি সড়কের আইল্যান্ডে শোভা পাচ্ছে বাগান বিলাস, এ্যালামুন্ডা, কলাবতিসহ নানা প্রজাতির ফুল। সাহেববাজার থেকে আলুপট্টি রাস্তায় সুগন্ধ ছড়াচ্ছে দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, চম্পা, হাসনাহেনা ও মিনি রঙ্গন। কিছুদিন আগে কাজ শেষ হওয়া কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বহরমপুর রাস্তাটিও সেজেছে বর্ণিল সাজে। এই রাস্তায় সুগন্ধ আর সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে গৌরিচোরা, রঙ্গন, টগর, মসুন্ডাসহ নানা প্রজাতির ফুল। কোর্টচত্ত্বর থেকে কাশিয়াডাঙ্গার রাস্তায় এখন রয়েছে টগর, মুসুন্ডা, কবরি, লালসালু, শিউলিসহ নানা প্রকার ফুল। এছাড়া নগরীর ঐতিহ্য চত্ত্বর থেকে নগর ভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে কাঠগোলাপ, চেরি, লালসালু, কাঞ্চন, পলাশ, ডেইজি, কৃষ্ণচুড়াসহ নানা প্রজাতির ফুল। লক্ষ্মীপুর থেকে ঘোড়াচত্ত্বর এবং লক্ষ্মীপুর থেকে সিএণ্ডবি পর্যন্ত সূর্যমুখি, সোনালু, জারুল, নডুসাই, কাঠগোলাপ ও জাকারান্দা জাতের ফুল সৌন্দর্য্য ছড়াচ্ছে।

নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বর্ধন আর সবুজায়ন করতে নগরীর নাহার একাডেমির পুরো রাস্তায় চালতা গাছের লেন; কলাবাগান এলাকায় কাঠবাদাম; ভদ্রা আবাসিকের রাস্তায় একটু পর পর আম গাছ; আলিফ-লাম-মীম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত সড়িষা ফুল আর নানা রকমের কাঠের গাছে ছেয়ে আছে। এছাড়া নগর ভবন থেকে ভদ্রা মোড়; ঈদগাহ মাঠ হয়ে নদীর তীর ধরে ভেড়িপাড়া মোড়; লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে ঘোষপাড়া মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে কোর্ট পর্যন্ত এসব রাস্তার সড়ক বিভাজনে সোভা পাচ্ছে বাগান বিলাস, কলাবতি, দোলনচাঁপা, রঙ্গন, জ্যাকারেন্ডা, এ্যালমুন্ডা, টগর, গাঁদা, গোলাপ, শিমুল, বেলী, শিউলি, কাঠগোলাপ প্রভৃতি নানা রকমের ফুল।

ফুল-ফল আর ওষুধ গাছের মাধ্যমে নগরীর রাস্তার সৌন্দর্র্র্য্য বর্ধনের পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পদ্মারপাড়, পদ্মার চরসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোর। এসব জায়গায় লাগানো হয়েছে নানা ধরনের ফুল,ফল ও কাঠের গাছ। বিলীন হতে যাওয়া সিমলার বাবলা বন (সিমলা পার্ক) ফিরিয়ে আনতে লাগানো হয়েছে বাবলাসহ নানা প্রজাতির গাছ।

এদিকে নগরীর বিলসিমলা লেভেল ক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার ফোর লেন সড়কে বসানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি। সড়কের মাঝে পোলগুলোয় দিনের বেলা দেখে মনে হয় বসে আছে প্রজাপতি। রাতের বেলা সেই প্রজাপতির ডানায় জ¦লে ওঠে আলো। দৃষ্টিনন্দন এই প্রজাপতি বাতিতে আলোকিত হয় পুরো সড়ক। এছাড়া পদ্মাপাড়ে দৃষ্টিনন্দন দুটি ওভারব্রিজ করা হয়েছে।

নানা রংয়ের ফুল-ফলের গাছ, দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি আর নানা রঙে আলপনায় রঙিন হওয়া রাজশাহী শহর এখন বাহির থেকে আসা যে কারো দৃষ্টি কারছে। নগরীর বিলসিমা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েক মাসে রাজশাহী নগরীর চেহারা পুরোই আলাদা হয়েছে। ফোরলেন সড়ক, অভার ব্রিজ আর পিচঢালা পাকা রাস্তায় যেভাবে ফুল-ফল আর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে তাতে মনে হয় স্বপ্নের রাজশাহী নগরী বিশে^র অন্যান্য মডেল শহরকেও হার মানাবে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এনভায়রোনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার সৈয়দ মাহমুদ-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী নগরীকে ফল-ফুলের নগরী হিসেবেই সাজাতে চাই। এবার পুরো নগরীতে ৪২ হাজার ১৬৯ টি গাছ লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ৩৩৩ টি গাছ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়েছে। নগরীর সকল ওয়ার্ডের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও স্থাপনায় লাগানো হয়েছে এসব গাছ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার নগরজুড়ে এক লক্ষাধিক শীতকালীন ফুল গাছ লাগানো। বিভিন্ন জায়গায় এবার সরষে ফুলও (এক বারের জন্য) লাগানো হয়েছে। এছাড়া সারা বছরের জন্য লাগানো হয়েছে চার লক্ষাধিক হেজ। রাস্তায় ঢিল ছুড়া বা দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন রাস্তায় ফলের গাছ কম লাগানো হয়েছে। তবে নগরীর কয়েকটি স্থানে গত মাসে ১৮৮ টি ফল গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়া কল্পনা হলের মোড় থেকে শুরু করে তালাইমারি পর্যন্ত সড়কের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলেই শুরু হবে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।’

সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার নির্বাচনি অঙ্গিকার ছিল স্বপ্নের রাজশাহী নগরীকে বিশ্বের অন্যতম মডেল ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা সেই অঙ্গিকার বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সুদৃশ্য পোল ও আধুনিক সড়কবাতি নগরীর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো শহরে নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফল-ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে রাজশাহী নগরীর সৌন্দর্য্য আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।’

এএইচ/এস