অমিত হাসান:
রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙনে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে বেশ কিছু দিন থেকেই থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ভারতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ফারাক্কার প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেয়ার রাজশাহীতে পদ্মায় অস্বাভিক ভাবে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহীর পদ্মায় পানি না থাকলেও রাজশাহী এখন ডুবতে বসেছে ফারাক্কা থেকে ধেয়ে আসা পানিতে। হুমকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। ফারাক্কার প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেয়ার পরে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে পদ্মার পানি।
এই দুইদিনে অন্তত ২৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ফলে পদ্মায় এখন বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘এখন বর্ষা কাল। সেই হিসেবে পদ্মায় স্বাভাবিক হারেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মাঝে কয়েকদিন পানি কমে গিয়েছিল। এখন আবার সেটি বাড়ছে এটা ঠিক। বর্ষাকালে এমনটি হতেই পারে্।
তিনি আরো বলেন, এখনও পদ্মার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। আর ফারাক্কার পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তা যমুনা নদীর দহনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে বাাঁধ খুলতে হয় না’ত পানির চাপে বাঁধ টেকানো সম্ভব হবে না।
বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ লিডার শহিদুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় ১৮ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। আজ সন্ধ্যা ৬ টায় সেটি বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় বিকেল ১৮ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় পানি ছিল ১৭ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। সেটি ওইদিন বিকেল ৬টায় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৭ দশমিদক ৯৪ সেন্টিমিটার। গতকাল বুধবার সকালে সেই পানি বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিদক ৫ সেন্টিমিটার। আবার বিকেল ৬টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। ফলে গতকাল সারাদিনে আজকে পদ্মার পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যা এ বছরের সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ বলেও দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র।
চলতি বছর ভরা বর্ষায় পানি কখনোই ১৮ সেন্টিমিটারে ঠেকেনি। কিন্তু গতকাল সকালে ১৮ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে সেটি বিপদ সীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
ভারতের বন্যার কারণে বিহার অঞ্চলে দুই লাখ মানুষের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দিলে ১১ লাখ কিউসেক পানি সরে যাবে যাতে করে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বিহার রাজ্যে গত এক সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে।
বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতিতে ফারাক্কার ১০৪ গেটের ৪টি বাদে সব কটি গেটই খুলে দেয় ভারত। ফলে এমনিতেই মৌসুমী বন্যা সমস্যায় নাকাল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী গুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের আস-পাশের বাড়ি ঘর পানির নিচে চলে গেছে।
যদিও সরকারে পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ফারাক্কার সবকটি খুলে দেওয়ার পরও বাংলাদেশে তেমন কোন সমস্যা হবে না। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এ মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়ার চৌধুরী।
যদিও দেশে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলে আসছিলো, ১১ লাখ কিউসেক পানির প্রবাহ যদি বাংলাদেশের ভেতরে আসে তাহলে বাংলাদেশ অংশে পদ্মায় পানি বাড়বে কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হবে না।
স/অ