পড়াশোনায় মনোযোগী করতেই বাড়িতে পরীক্ষা!

শাহিনুল আশিক:


পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বাড়িতে। প্রশ্নপত্র সরবরাহ করছে স্কুল। অভিভাবক পাহারায় না শিক্ষার্থীর ইচ্ছে মতো পরীক্ষা হবে- এনিয়ে কোনো নির্দেশনা নাই। তাহলে শিক্ষার্থীরা কি বই দেখে পরীক্ষা দেবে? তবে শিক্ষকরা জানালেন, এমন পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহটা আবার তৈরি হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুরের বসন্তকেদার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হয়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
অভিভাবকদের দাবি- এভাবে স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। শিক্ষাকরা বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে।
প্রশ্নপত্র প্রদানের পরে বাড়িতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে কী ভাবছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা? স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলাম জানালেন, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনা করছে। আর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই ফেসবুক, গেম্স, টেলিভিশনে কার্টুন, বিভিন্ন সিরিয়াল দেখে সময় কাটাচ্ছে। মা-বাবা পড়তে বসতে বললে স্কুল ছুটি, এমন কথা বলে সন্তানরা। স্কুল খুললে পড়াশোনা করবে তারা। ফলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে তাদের।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা যেনো অযথাই এগুলোতে আসক্ত না হয় তাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, অভিভাবকগণ মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এভাবে পরীক্ষা নেয়ার। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দেয়া হবে। তারা বাড়িতে খাতায় লেখে স্কুলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের হাতে জমা দেবে। তাই প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একদিন একদিন করে ডাকা হয়েছে। তারা এসে সব বিষয়ের প্রশ্নপত্র একসঙ্গে নিয়ে যাবে। এছাড়া প্রশ্নপত্র প্রদানের সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা যদি বাড়িতে বই দেখেও পরীক্ষার খাতায় লেখে তাতে ক্ষতি নেই। কারণ দেখে লেখলেও অনেকটাই মুখস্ত হয়ে যাওয়ার কথা। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বাড়বে। এছাড়া পরীক্ষার কথা শুনলে সব শিক্ষার্থীর এমনিতেই চিন্তা হয়, ভালো ফলাফলের চেষ্টা জাগে। অভিভাবক পাহারায় পরীক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এই সহকারী প্রধান শিক্ষক মনে করেন, হঠাৎ করে সরকার দ্রুত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে সমস্যা হবে না। কারণ শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষাগুলোতে যতটুকুই লেখুক না কেনো, তাদের চর্চা থাকলো।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির জানায়, শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র দিয়ে বলেছেন বাবা-মার সামনে পরীক্ষায় বসতে। আমরা সেটাই করবো। পরীক্ষাগুলোতে লেখালেখি করলে আমাদের চর্চা থাকবে। ফাইনাল পরীক্ষায় এই লেখাপড়াগুলো কাজে আসবে। তখন শুধু রিভাইভ দিলেই হবে।
রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, গত ২ জুন জেলার ৫৪৫টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা করা হয়, শিক্ষার্থীদের কিভাবে বই ও পড়াশোনার মধ্যে ধরে রাখা যায়। তার অংশ হিসেবে এই পরীক্ষার আয়োজন করা।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন, সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করবেন। শিক্ষার্থীরা সেই প্রশ্নপত্রের আলোকে পরীক্ষা দেবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।