প্রেসিডেন্ট লুলার নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলের পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় দেশের ক্ষমতার তিন কেন্দ্র ‘আইনসভা, প্রেসিডেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে’ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নিরাপত্তা বাহিনী
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর সমর্থকদের নৈরাজ্যের জেরে কমপক্ষে এক হাজার ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার নিয়ন্ত্রণে।

গতকাল সোমবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় দেশের ক্ষমতার তিন কেন্দ্র ‘আইনসভা, প্রেসিডেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে’ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গত রবিবার একযোগে এই তিন দপ্তরে হামলা চালানো হয়। ব্রাজিলের নজিরবিহীন এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভার সরকার ব্যাপক তত্পরতা শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকজান্দ্রে দি মোরায়েস সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে এবং সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের অবস্থান তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

লুলার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের দাবিতে বলসোনারোর সমর্থকরা সামরিক বাহিনীর দপ্তরের সামনে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিল। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ওই বিক্ষোভ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর দপ্তরের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর তত্পরতা শুরুর পর বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট লুলা রাজধানীর ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়, যাতে রাজধানীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়।

ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ইবানেইস রোচা রাজধানীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অ্যান্ডারসন তোরেসকে বরখাস্ত করেছেন, যিনি বলসোনারোর মন্ত্রিসভায় বিচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের কাছে তোরেসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।

সপ্তাহখানেক আগে ক্ষমতায় বসা প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভা এ হামলাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর আরারাকুয়ারায় তাঁর সফরের সময় এ হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে ফিরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বলসোনারোর মদদে এসব ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করা জায়ের বলসোনারো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তবে সরকারি দপ্তরগুলোতে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ‘উগ্র ডানপন্থী’ হিসেবে পরিচিত এই নেতা। এ ছাড়া লুলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। ব্রাজিলে নজিরবিহীন এ সহিংসতার নিন্দা জানানো হয়েছে সারা বিশ্ব থেকে। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যেভাবে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করেছিলেন, ব্রাজিলে বলাসোনারোর সমর্থকদের হামলা সে রকমই।

জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। লাতিন আমেরিকার নেতারাও লুলার পক্ষে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ব্রাজিলের এ হামলার নিন্দায় সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা ‘ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ’।

এদিকে ফ্লোরিডায় বলসোনারোর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বলসোনারোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের জন্য চাপ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতা জোয়াকিন কাস্ত্রো বলেছেন, বলসোনারোর ফ্লোরিডায় থাকা উচিত নয়। ব্রাজিলে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদকে উত্সাহিত করা এই কর্তৃত্ববাদীর আশ্রয় যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া উচিত নয়। তাঁকে ব্রাজিলে ফেরত পাঠানো উচিত।

ডেমোক্র্যাটদের নারী কংগ্রেসম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘বলসোনারোকে ফ্লোরিডায় আশ্রয় দেওয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।’ তিনি তাঁর লেখায় ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের সঙ্গে ব্রাজিলের সহিংসতাকে তুলনা করেন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ