প্রশিক্ষণ ছাড়াই নকশি কাঁথা তৈরি করছে জয়পুরহাটের নারীরা

এস এম শফিকুল ইসলাম
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর গ্রামের নারীরা আজও সংসারের কাজের অবসরে ঘরে বসে তৈরি করছেন মনোলোভা নকশি কাঁথা। প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করা কাঁথাগুলো দেখতেও সৌখিন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগীতা ও বাজারজাত করার সুযোগ পেলে ঘরে বসেই এসব নারীরা হতে পারে স্বাবলম্বী। এসব সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই নিজের জ্ঞানেই রকমারি ডিজাইনে নকশি কাঁথা তৈরি করতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা আলমপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা জোবেদা আক্তার তার নিজ গ্রামসহ পার্শবর্তী গ্রামের বেকার নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন নকশি কাঁথা তৈরির একটি সংগঠন। যার নাম দিয়েছেন ‘স্বদেশ প্রীতি’। যেখানে সংসারজীবী ১০০ জন নারীকে নিয়ে নকশি কাঁথা তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই নকশি কাঁথা সেলাইয়ের এই সংগঠন গড়ে তোলার কথা জানালেন সংগঠনের এই নারী উদ্যোক্তা। জোবেদার এমন উদ্যোগে উৎসাহি আশ পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের নারীরা। সংসারের কাজের অবসরে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই কয়েক বছর থেকে নকশি কাঁথা তৈরি করছেন এ সংগঠনের নারীরা। নিজেদের জ্ঞানে যে যার মত করে বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করা কাঁথাগুলো তারা বিভিন্ন গ্রামের বিত্তবানদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। প্রশিক্ষণ ছাড়াই পরিশ্রম করে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

আলমপুর গ্রামের পার্শ্ববতী মহমুদপুর গ্রামের আয়েশা খাতুন, ফুলদিঘী গ্রামের মর্জিনা বেগম, বানাইচ গ্রামের জায়েদা খাতুনসহ আশে পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের নকশি কাথা তৈরির মহিলা কারিগরেরা জানান, সংসারের কাজকর্ম করার পর বেশ সময় হাতে থাকে। এই সূযোগে নকসি কাঁথা সেলাই করে বেশ কিছু টাকা আয় করি। সেই টাকা আমরা ব্যাংকে রেখে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাই। প্রতিটি নকসি কাঁথা সেলাই করতে ১৫/২০ দিন সময় লাগে। প্রতিটি কাঁথার মূল্য ৪ হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আশে তাদের তৈরি নকশি কাঁথা নিতে। রংপুর থেকে আশা লাইলা বেগম, বগুড়ার নিঝুম আক্তার, নাটোরের পপি আক্তার জানান, এখানকার নকশি কাঁথা বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি করা হয়। অনেকের মুখে শুনে এখানে এসেছি। বাস্তবে না দেখলে হয়তো শুধু শুনেই থাকতাম। এখানকার নকশি কাঁথা আসলেই ভাল। আমরাও কিনেছি।


তবে প্রশিক্ষণ আর আর্থিক সহযোগীতা পেলে প্রসার ঘটবে এমন দাবি আত্মপ্রত্যয়ী নারীদের। প্রশিক্ষণ আর আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে গ্রামীণ নারীদের এই প্রচেষ্টাকে ব্যাণিজ্যিক রূপ দিতে এগিয়ে আসবেন সংশ্লিষ্টরা এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসির।

জয়পুরহাট জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা জানান, ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর গ্রামসহ আশে পাশের কয়েক গ্রামের নারীরা নকশি কাঁথা সেলাই করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে এমনটা শুনে আমি সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছি।

এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে তিনি সিল্কসিটি নিইজকে আরো জানান, এই নারীদেরকে যদি আমরা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষন দিয়ে আরো দক্ষ করতে পাড়ি এবং উদ্যোক্তা প্রশিক্ষন দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে পাড়ি তাহলে তাদের আয় আরো বেড়ে যাবে সংসারে আরো উন্নতি ঘটবে এবং তাদের সাফল্য আসবেই।

স/অ