প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মালেক ছিলেন অপ্রতিরোধ্যে

অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সখ্য ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আবদুল মালেকের। এসব ব্যক্তির সঙ্গে দহরম-মহরম থাকায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্যে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাত্তাই দিতেন না মালেক। কখনও প্রভাব খাটিয়ে আবার কখনও মোটা অঙ্কের বিনিময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে লোকজনকে চাকরি দিতেন। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন মালেক। শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ কিংবা বদলি করেই নয়, প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসকদের বদলি করেও কামিয়েছেন বিপুল অঙ্কের টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অবৈধ অর্থ সংগ্রাহক ছিলেন গাড়িচালক মালেক। চালকদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র। তাকে বা তার ঘনিষ্ঠ কোনো চালককে বদলি করা গেলে তাকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন সাবেক মহাপরিচালক বলেন, তিনি মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই গাড়িচালক মালেকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারেন। এ কারণে তিনি মালেককে একটি দিনের জন্যেও তার গাড়ি চালাতে দেননি। কয়েকবার তাকে অন্যত্র বদলির উদ্যোগও নিয়েছিলেন এই পরিচালক, কিন্তু মানসম্মান হারানোর ভয়ে বদলির সাহস করেননি।

কী কারনে সাহস করেননি, জানতে চাইলে ওই মহাপরিচালক বলেন, নানা অনিয়মের অভিযোগে তার নির্দেশে কয়েকজন চালককে বদলি করা হলে মালেক তাদেরকে তিন মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনবেন বলে একজন পরিচালককে চ্যালেঞ্জ করেন। তিন মাসের মধ্যে প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে সেই চালকরা অধিদফতরে বদলি হয়ে আসেন।

তিনি বলেন, চালকরা যদি এভাবে কর্মকর্তাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বদলি হয়ে চলে আসেন, তাহলে মানসম্মান আর থাকে কোথায়? এ কারণে কৌশলে গাড়িচালক মালেককে এড়িয়ে গেছেন বলে জানান এই মহাপরিচালক।

উল্লেখ্য, গত রোববার ভোরে র্যাব-১ এর একটি দল তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার বামনেরটেক এলাকার বাসা থেকে আবদুল মালেককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মালেক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।

রাজধানীর তুরাগে গাড়িচালক আবদুল মালেকের রয়েছে ২৪টি ফ্ল্যাটবিশিষ্ট সাত তলার দুটি বিলাসবহুল বাড়ি। একই এলাকায় ১২ কাঠার প্লট। এছাড়া হাতিরপুলে ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।

মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনকে জিম্মি করে চিকিৎসকদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন তিনি। চিকিৎসকদের বদলি-পদোন্নতিতেও ছিল তার হাত। নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে তদবিরের নামে-বেনামে আদায় করেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। যার বদৌলতে অল্প দিনেই শতকোটি টাকারও বেশি অর্থ-সম্পদের মালিক এই মালেক ড্রাইভার।

নিজে অধিদফতরের একজন গাড়িচালক হয়েও মালেক একটি পাজেরো জিপ ব্যবহার করতেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্যান্টিনটি পরিচালনা করতেন তিনি। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের যত গাড়ির চালক তেল চুরি করে, তার একটি অংশ তাকে দিতে হয়। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি পুরো অধিদফতর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

র্যাব জানায়, মালেক পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন চালক। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ