‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দিনটি ছিল স্পেশাল’

শাহিনুল আশিক:

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শিরিনা বলছে, ‘১২ সেপ্টম্বরের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্পেশাল দিন। আমার কাছে তার চেয়ে বেশি স্পেশাল। কারণ আমার জন্মদিন। আবার এই দিনেই খুলেছে স্কুল। আমার অনেক আনন্দ লাগছে স্কুলে আসতে পেরে।’ শিরিনার কথাই ঠিক; সত্যই স্পেশাল দিন। এই দিনে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষের দরজা খুলেছে। এর মধ্যে দিয়ে ৫৪৪ দিনের ঘরবন্দি জীবনের অবসান ঘটেছে শিক্ষার্থীদের জীবনে।

রোববার সকাল সাড়ে আটটা নগরীর নামো ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি খোলার আগেই শিক্ষার্থীরা এসে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের ছাপ। একে অপরের সাথে তাদের হয়েছে হাই হ্যালো (কুশল বিনিময়)।
তার কিছুক্ষণ পরেই খুললো স্কুলের দরজা। আগে থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক নিয়ে ক্লাস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকরা।

ক্লাসে প্রবেশের আগেই স্যানিটাইজ ও মাস্ক পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে। মাস্কগুলো ছিল কাপড়ের। আর একেকটির উপরে লাল লাল ফুল, আবার কোনটিতে সবুজ রঙের ফুলে ভরা পুরো মাস্ক। শ্রেণি কক্ষে বেঞ্চে বসা ফুলগুলোর (শিক্ষার্থী) মুখে বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল মাস্কগুলো।

সরেজমিনে এই স্কুলটিতে দেখা গেছে, প্রতি বেঞ্চে একজন করে বসেছে। তবে একজন বেঞ্চের ডান পাশে তো অপরজন বেঞ্চের বাম পাশে বসেছে। প্রতিটি ক্লাস রুমের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ে পড়েছেন মাস্ক।
স্কুলটির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রতনা অধিকারী ও বৃষ্টি খাতুন জানায়, ‘অনেক দিন পরে স্কুলে এসেছি, অনেক ভালো লাগছে। ক্লাসে বসেছি, সব বন্ধু বান্ধবীদের সাথে কথা বলছি। অনেক ভালো লাগছে।’

শিক্ষক শামিমা নাসরিন বলেন,‘শিক্ষার্থীদের দূরে দূরে বসানো হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি বার বার বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বার বার মুখে না নাকে হাত না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।’

স্কুলটিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিদর্শনে আসেন প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম। তারা বিদ্যালয়টির চারটি ক্লাস রুম পরিদর্শন করে। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম জানান, রাজশাহীতে সব সরকারি প্রথামকি বিদ্যালয় খোলা ছিল। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক ভাল ছিলো। বিদ্যালয় প্রধানদের সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছ।’

অন্যদিকে, নগরীর বেশি কয়েকটি বেরকারি স্কুল ও কলেজে দিয়ে দেখা গেছে- শিক্ষার্থীদের একটি ব্রেঞ্চে একজন করে বসানো হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাস্ক পড়তে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে গল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শুধু ছাত্র-ছাত্রীর নয়, আমাদের অনেক পরিচিত অভিভাবকদের সাথে দেখা হয়নি। আজ দেখা হলো, গল্প হলো। করোনাকালীন কার কিভাবে কেটেছে। কারও পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কি না। সবমিলে অনেক ভালো দিন কেটেছে সবার। আগে থেকে ছেলে-মেয়েদের প্রস্তুতি ছিল। তার স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ আগেই গুছিয়ে নিয়ে ছিল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাস্ক ছাড়া কেউ স্কুলে ঢুকতে পারবে না। এমন নির্দশনা দেওয়া ছিল। কোনো শিক্ষার্থী ভুল করেও মাস্ক না নিয়ে আসেনি। তার পরেও আমাদের প্রস্তুতি ছিল মাস্ক সরবরাহের। সবমিলে সুন্দর পরিবেশে প্রথম দিনে ক্লাস করেছে শিক্ষার্থীরা।

স/আ