প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিবন্ধী স্কুলে বিনা বেতনে পাঠদান 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে শতাধিক প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকে বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এলাকার অবহেলিত শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্কুলমুখী করছেন তাঁরা। বিনিময়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ন্যূনতম সম্মানীও মিলছে না তাঁদের। বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়া এই বিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাঁদের।

অথচ শত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তাঁরা। এই অবহেলিত শিক্ষার্থীদের মুখের হাসিতেই প্রশান্তি মিলছে শিক্ষকদের মনে। ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য সরকারি বা বেসরকারি সহায়তার দাবি জানান তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তেওতা ইউনিয়নে ষাইট ঘর তেওতা গ্রামে এক যুগ আগে কয়েকজন নারী শিক্ষক একটি প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বিকেলে ক্লাস শুরু হয়। এভাবে চলতে থাকে তাদের কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি সাত শতাংশ জায়গা দান করলে সেখানে মুন্সী আব্দুল জলিল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নামে কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আলাদা শিক্ষাও দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রতিবন্ধী সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। এমন মনোভাব পরিবর্তন করতেই কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এসব ছেলে-মেয়ের অভিভাবকদের বুঝিয়ে স্কুলমুখী করতে প্রতিনিয়তই নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আবার সমাজের অনেকেই এসব শিক্ষককে সামাজিকভাবে হেয় করেন। এত কিছুর পরও দমে যাননি তাঁরা।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্কুলে মোট ১০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্য ৪৪ জন বাকপ্রতিবন্ধী। বাকিদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তাদের বিশেষ কায়দায় শিক্ষা দেওয়া হয়। জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থয়ানে ছোট একটি পাকা ভবন থাকলেও সেখানে সবার জায়গা হয় না। শিক্ষকদের ন্যূনতম বেতন না থাকায় সবাই অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হলেও কোনো সহায়তা মেলেনি। বর্তমানে বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে হলেই সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা খুবই জরুরি বলে তিনি জানান।

রহিমা নামের আরেক শিক্ষিকা বলেন, আমরা বিনা বেতনে এসব শিক্ষার্থীকে পড়ানোর কারণে স্বামীরা নানা চাপ দেন। অন্য পেশায় থাকলেও অন্তত কিছু আয় করতে পারতাম। এ কারণে যত দিন সরকারীকরণ না হয়, তত দিন পর্যন্ত বিত্তবানরা সহায়তা করলে আমরা টিকে থাকতে পারতাম।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্যাররা আমাদের অনেক যত্ন করে লেখাপড়া করান। অন্য স্কুলে গেলে ওখানকার ছেলে-মেয়েরা আমাদের অবহেলা করে। তাই আমরা এই স্কুলে পড়ি।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, স্কুলটি সম্পর্কে অবগত রয়েছি। শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিষয় এটি। তার পরও আমরা বাজেট অনুযাযী তাদের সহায়তা করব।

সূত্র: কালের কণ্ঠ