বাইশ গজে ছুটে গেলেন আফগানিস্তান দলের অনেকেই। কিন্তু চট দিয়ে ঢেকে রাখা উইকেট কেউ আর দেখতেও চাইলেন না। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা নিজে থেকে দেখাবেন কি না জানতে চেয়েও খুব আগ্রহী করে তুলতে পারলেন না মুজিব-উর রহমানকে, ‘দরকার নেই। ’
এই রহস্য স্পিনারের দরকার নাই থাকতে পারে।
ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলার সূত্রে আরো তিন সপ্তাহ আগে থেকেই বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে আছেন। এই মাঠেও খেলেছেন তিন-তিনটি ম্যাচ। এর মধ্যে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে যে ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি, তাতেও ৪ ওভারে ১টি মেডেনসহ ১৩ রান দিয়ে ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দেওয়ায় রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। ১৯টি ডট বল দেওয়া মুজিব অন্য দুই ম্যাচেও যথারীতি নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। উইকেটের ধর্ম-বর্ণ জানেনই যখন, দেখবেন কেন!
তাঁর মতো বিপিএল না খেলা রশিদ খান কিংবা মোহাম্মদ নবিদের কাছেও এখানকার উইকেট অচেনা নয় একদমই। প্রায় আড়াই বছর আগে এখানেই তো তাঁরা বল হাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ অধ্যায় লিখে গিয়েছিলেন। আফগানদের স্পিন শক্তি বিবেচনায় অন্য রকম উইকেটে খেলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও পরে তা বদলে যায়। একমাত্র টেস্ট খেলার জন্য স্পিন সহায়ক উইকেটই বেছে নেওয়া বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন না কোনো পেসারও। এই ভুলের সুফল সুদে-আসলে তুলে নেন ওই টেস্টে আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ। লেগ স্পিনে দুই ইনিংস মিলিয়ে তুলে নেন স্বাগতিকদের ২০ উইকেটের ১১টিই। ২২৪ রানের বিশাল জয় দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান ৪ উইকেট নেওয়া অফস্পিনার নবিও।
কিছুদিন ধরে এখানে থাকা মুজিব আর না থাকা রশিদ-নবির মধ্যে তাই খুব পার্থক্যও নেই। থাকুন বা না থাকুন, এখানকার উইকেট বুঝতে কোনো সমস্যাই হয় না তাঁদের। এই স্পিন-ত্রয়ীর উপস্থিতি যেন আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে স্বাগতিক আর সফরকারীর কোনো বিভেদও রাখছে না। এক কাতারে থাকা দুই দলের কাছেই এখানকার বাইশ গজ বড্ড চেনা। সেই চেনা-জানা থেকে আফগানিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদিও অবলীলায় বলে দিতে পারলেন, ‘আমাদের স্পিন আক্রমণ দারুণ। আর বাংলাদেশের উইকেটে এটা বেশ কাজেও দেবে। ’
সে জন্য আফগানরা উইকেট দেখার প্রয়োজন খুব বোধ না করলেও দেখেছেন তামিম ইকবাল। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধায় তাঁর এবং দলের চাহিদা মেনে এবার একটু অন্য রকম উইকেটই তৈরি হয়েছে বলে আভাস দিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। প্রতিপক্ষের স্পিন-শক্তি বিবেচনায় পুরনো ভুলের ফাঁদেও পড়তে না চাওয়া স্বাভাবিক, ‘চট্টগ্রামের উইকেট তো সাধারণত ভালোই হয়। বিপিএলেও ভালোই ছিল। স্পোর্টিং উইকেট আশা করছি। যেখানে পেসার-ব্যাটার সবার জন্যই সহায়তা থাকবে। ’
তেমন উইকেট হলেও নিজের চাতুরী দিয়ে সাফল্য তুলে নেওয়ার নমুনা বিপিএলেও দেখিয়েছেন মুজিব। তবে সংস্করণ ওয়ানডে বলেই হয়তো প্রতিপক্ষের স্পিন-শক্তি খুব বেশি উপদ্রব হয়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না তামিমেরও। ওয়ানডেতে আটবারের দেখায় এখন পর্যন্ত এগিয়ে তামিমরাই। তিন ম্যাচে হারা বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচবার। ২০১৯-এর বিশ্বকাপে সর্বশেষ দেখায় আফগানদের ৬২ রানে উড়িয়ে দেওয়া জয়ে নিষ্প্রভ ছিলেন রশিদও। ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা লেগির বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে পারফরম্যান্সও উল্লেখযোগ্য নয়। ৬ ম্যাচে ১০ উইকেট তাঁর। ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট নেওয়া মুজিবকেও ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সফল বলার কারণ নেই।
যে কারণে স্পিন-ভীতি গায়ে লাগছে না তামিমেরও, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে নিয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে চাই না। যেটা বললাম, ওদের বোলিং অনেক ভালো। সম্ভবত সেরা স্পিন আক্রমণ ওদেরই। কিন্তু এদের বিপক্ষেই আমরা অতীতে অনেক ভালো করেছি, বিশেষ করে ওয়ানডে সংস্করণে। (আগে পারলে) তাহলে আবার কেন পারব না?’
দুই দলের জন্যই চেনা বাইশ গজে লড়াই শুরুর আগে তামিমের পাল্টা প্রশ্নেই যেন লুকিয়ে স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাস!
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ