শনিবার , ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে হাজারো রোগী, ডায়রিয়া ঠেকাতে তিন প্রতিষ্ঠানের ঠেলাঠেলি

Paris
এপ্রিল ১৬, ২০২২ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

দেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। গত ১ মার্চ থেকে গতকাল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৪৮ হাজার ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী চিকিৎসা নিয়েছে রাজধানীর ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিআরবি) হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৮ এপ্রিলের পর থেকে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমলেও কোনো দিনই তা হাজারের নিচে নামেনি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা—এই তিন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে সহায়তা দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন বলছে, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বা পানি বিশুদ্ধ করার দায়িত্ব ওয়াসার। আর ওয়াসা বলছে, আমরা আমাদের পানিতে ডায়রিয়া বা কলেরার কোনো জীবাণু পাচ্ছি না।

গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয় এক হাজার ৫৮ জন। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় ভর্তি হয় ৬১৯ জন। এর আগে গত ৪ এপ্রিল ভর্তি হয় এক হাজার ৩৮৩ জন। আইসিডিআরবির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী আগে আর কখনো দেখা যায়নি। ভর্তি রোগীদের ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতাল ও ঢাকার বাইরের হাপপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ নেই। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৭ সালে বন্যা ও একই সঙ্গে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হলে তখন রাজধানীতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। ২০১৮ সালেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সে সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগের হলেও সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতি লজ্জার : সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য মুখে খাবার স্যালাইন তৈরি হয়েছে। কলেরা টিকা তৈরিতেও আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের অবদান আছে। কিভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, সে জ্ঞানও আমাদের রয়েছে, কিন্তু এবার দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডায়রিয়ার প্রকোপ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না—এ পরিস্থিতি লজ্জার। ’

জনপ্রতিনিধিরা যা বলছেন : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর যে পাঁচটি এলাকার বাসিন্দাদের কলেরা টিকা খাওয়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও ডায়রিয়া রোধ করতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ী এলাকার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। এই পানির কারণেই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে এলাকায় ওয়াসার লাইনের পানির পরিবর্তে গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এটা খুবই ব্যয়বহুল। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়নি। আমি আমার এলাকায় দ্রুত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের দাবি জানাচ্ছি। ’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার সভা করেছি। তাঁরা বলেছেন, পনি সরবরাহের বিষয়টি তাঁরা দেখবেন। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি যে উদ্বেগ তৈরি করেছে সেটা থাকবে না। আর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট যদি বিতরণ করতে হয় তাহলে তা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগেই করতে হবে। কারণ ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যে সুবিধা রয়েছে, তা এনজিও পার্টনারদের সহযোগিতায় পুরোটাই সিটি করপোরেশন পরিচালনা করে। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে আগের মতোই সহায়তা দেওয়া হবে। ’

ঢাকার বাইরের অবস্থা : গত এক সপ্তাহে বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৯৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। এ সময়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ৮৩ জন। গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু, নারীসহ মোট ১৭ জন রোগী ভর্তি হয়। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ২৪ জন। বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে, বারান্দা ও ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় শয্যা নিতে হয়েছে কয়েকজনকে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মুনয়েম বলেন, এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

২০ দিন ধরে ময়মনসিংহে ডায়রিয়া পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জনের মতো রোগি ভর্তি হচ্ছে সরকারি দুটি হাসপাতালে। রোগী খুব বেশি বাড়ছে না। গতকাল শুক্রবার নগরীর এস কে হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ জনের মতো। চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক রোগী ভর্তির পর কিছুটা সুস্থ হয়ে একই দিনেই বাড়িতে চলে যাচ্ছে। এ কারণে হাসপাতালে তেমন চাপ থাকছে না।

ময়মনসিংহ এস কে হাসপাতালে মূলত ডায়রিয়ার রোগীই ভর্তি হয়। এ হাসপাতালের প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকছে। বয়স্ক রোগীই বেশি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়