শনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্যে শত কোটি টাকার মালিক বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান

Paris
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান হলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম আক্তার জাহান। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে বিএমডিএ’র কমিশন বাণিজ্যের অন্যতম হোতা আক্তার জাহানের পদটি। কাগজে-কলমে তিনি এখনো চেয়ারম্যান। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে আর বিএমডিএ অফিসে জাননি এ নারী। আত্মগোপনে থেকে এখনো কলকাঠি নাড়ছেন বিএমডিএ’র নানা কাজে। অভিযোগ উঠেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়া, কমিশন বাণিজ্য, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য করে গত প্রায় তিন বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে থেকে আক্তার জাহান অন্তত দুইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বনি এশরাইলের মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে বেকার বনিও এখন কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনিও আত্মগোপনে আছেন।

বিএমডিএ সূত্র মতে, ২০২১ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার দুই বছরের জন্য বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আখতার জাহান। এর পর গত বছরের ১৩ আগস্ট আবারও দুই বছরের জন্য একই পদে নিয়োগ পান তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। আর নিয়োগ পাওয়ার থেকেই আক্তার জাহান বিএমডিএকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। বিএমডিএ’র এমন কোনো কাজ নাই যে কাজের জন্য তাঁকে কমিশন দিতে হয় না।

বিএমডিএ সূত্র মতে, গত তিন-চার বছরে বিএমডিএ’র সাতটি প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। খাল খনন, পুকুর খনন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার, গভীর নলকূপ পূর্নবাসন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে এসব উন্নয়নকাজগুলো করা হলেও প্রতিটি প্রকল্প থেকে অন্তত ১০ ভাগ কাজ নিতেন চেয়ারম্যান বেগম আক্তার জাহান। প্রতিটি টেন্ডারেই তাঁর মনোনীত ঠিকাদারকে দিতে হতো অন্তত ১০ ভাগ কাজ। ওই কাজ চেয়ারম্যান আক্তার জাহান বিক্রি করে দিতেন তাঁর সেই পছন্দের ঠিকাদারের কাছে। এভাবে গত তিন বছরে তিনি নিজেই অন্তত ৩০০ কোটি টাকার কাজ বিক্রি করেছেন ঠিকাদারের কাছে। আর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে তিনি আদায় করতে ২৫-৩০ ভাগ টাকা। ফলে প্রকল্পের কাজ বিক্রি করেই তিনি গত তিন বছরে অন্তত ৮০-৯০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

বিএমডিএর’র একটি সূত্র জানায়, গত তিন বছরে বিএমডিএতে কর্মরত অন্তত দুইশ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া হয়। এসব পদোন্নতির একটিও মন্ত্রণালয় থেকে অুনমোদন নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন নিয়ে এসব পদোন্নতি দেওয়া হয়। এমনকি বিএমডিএ’র অর্গানোগ্রামে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী না থাকলেও তিনজনকে ওই পদে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারম্যান কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এর বাইরে গত তিন বছরে অন্তত ৫০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয় অর্থের বিনিময়ে। সেখান থেকেও কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে জানান, গত তিন বছর ধরেই বিএমডিএতে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। তারাই সব কাজ করতেন। এর সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকরাও এর ভাগ পেতেন। তালিকা করতেন চেয়ারম্যানের পিএ বনি এশরাইল। বনি প্রতিটি কাজের জন্য অন্তত ২৫ ভাগ কমিশন নিতেন চেয়ারম্যানের নামে। গত ২৮ এপ্রিল বিএমডিএ ভবনে গিয়ে কাজ না পেয়ে শাকির হোসেন নামের এক ঠিকাদার ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাকের সার্টের কলার চেপে ধরেছিলেন। এ নিয়ে ওইদিন বিএমডিএতের ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ঠিকাদারদের শাকির হোসেন অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক রাজশাহীর অনেক ঠিকাদারকেও কাজ দেননি। বিপুল টাকার বিনিময়ে কাজ দেওয়া হয়েছে নাটোর, নওগাঁ ও ঈশ্বরদীর ঠিকাদারদের। একজন ঠিকাদারকে একটির বেশি কাজ দেওয়া হবে না বলে বিএমডিএ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত এপ্রিলে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০টি কাজ দেওয়া হয়েছে পাঁচ-সাতজন ঠিকাদারকে। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হোন রাজশাহীর ঠিকাদাররা।
আরেক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ পুন:স্থাপন প্রকল্পের জন্য যেসব পাইপ সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে সেখান থেকেও কমিশন আদায় করেছেন চেয়ারম্যান। তাঁকে কমিশন না দিলে কোনো মালামাল সরবরাহ করা যায়নি। ব্যক্তিগত সহকারী বনির মাধ্যমে এই কমিশন আদায় করতেন চেয়ারম্যান।’

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও টেন্ডার নিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে ঝামেলা তৈরী হয় বিএমডিএতে। অভিযোগ উঠেছে, বিএমডিএ’র এমন কোনো প্রকল্প নাই যেখানে অনিয়ম হয় না। এমনকি প্রকল্প পরিচলাকরা নিজেরাই গাড়ি কিনে প্রকল্পেরে নামে ভাড়া খাটান। সেখানে থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার তেলসহ ভাড়া বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। এসবও হয় চেয়ার‌ম্যানের ছত্রছায়ায়।

তবে এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান বেগম আক্তার জাহানের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর