‘পেটের কাছে লজ্জা বলে কিছু নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভদ্রা মোড়ে আজ বুধবার (২৫ আগস্ট) আসেনি টিসিবির গাড়ি। তাই অনেকেই কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা দাঁড়িয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। এসময় ফিরে যাওয়া মানুষগুলোর সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে আব্দুর রশিদ তার স্ত্রী রোকেয়ার ও আরেক নারী আজেদা। তারা সবাই অল্প দামে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছিলেন।

৭৫ বছর বয়সের আজেদা জানান, ‘বাবা আমার বাড়ি খড়খড়ি বাইপাসের বামনশিকড় এলাকায়। স্বামী অন্যত্রে ঘর বেধেছে। আমি ভাইদের কাছে থাকি। তিন বছর আগে ইটের ভাটায় কাজে গিয়ে আমার পুরো শরীর আগুলো ঝলসে যায়। তার পর থেকে আর কাজ করতে পারিনা।’

নগরের সাহেব বাজার এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি। ছবিটি সোমবার তোলা।

তিনি আরো বলেন,  ‘এই লাইন থেকে তেল তিনলে লিটারে ৫০ টাকা কম। কষ্ট হলেও কি আর করার। মসুরের ডাল কিনলেও একই। তাই লাইনে দাঁড়িয়েছি ভোরে। আমার মত অনেকেই আসে অটোরিক্সা ভাড়া করে। লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগে, কি করবো পেটের কাছে লজ্জা বলে কিছু নেই।’

দামের ফারাক ৫০ টাকা। বাজারে সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা লিটার। আর টিসিবি বিক্রি করছে ১০০ টাকা। টিসিবি’র ডিলার থেকে কিনলে পাঁচ লিটার তেলের ক্যানে ২৫০ টাকা সাশ্রয়। ফলে টিসিবি’র সয়াবিন পেতে ক্রেতাদের হুড়োাহুড়ি, এমন কি মারামারির মত ঘটনাও ঘটেছে।

ডিলাররা বলছেন, একজন প্রতিদিন টিসিবির পণ্য কিনলে তাদের কিছু করার নেই। লাইনে দাঁড়ালে যে কেউ টিসিবির পণ্য কিনতে পারবে। টিসিবি বলছে, এমন সমস্যা এড়াতে ঝটিকা পরিবর্তন হবে টিসিবির পণ্য বিক্রির পয়েন্টগুলো।

জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েক দফা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এখন দোকানে বোতলজাত তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ (বসুন্ধরা) থেকে ১৫০ (রূপচাঁদা) টাকা দরে। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৮ টাকা লিটার। বোতলজাত তেলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলে বাঁচবে ১৭ থেকে ২২ টাকা। আর টিসিবির লাইন থেকে এক লিটার তেল নিলে দোকানের তুলনায় বাঁচবে ৫০ টাকা।

রোজিনা ইসলাম নামের এক নারী জানান, দোকানের তুলনায় টিসিবির লাইনে এক লিটার তেলে ৫০ টাকা কম। আর মসুরের ডালে প্রায় ৫০ টাকা কম। আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষ কিনছেন টিসিবির পণ্য। তিনি আরো বলেন, মাসে একদিন লাইন থেকে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুরের ডাল কিনি। আজ লাইনে দাঁড়িয়েছি প্রতিবেশি অসুস্থ মানুষের জন্য। তিনি টাকা দিয়েছেন। এগুলো কিনে তাকে দেব।

টিসিবির ডিলারের গাড়ি না আসায় ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই

টিসিবির ডিলার মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজের আশকান আলী সরদার জানান, ‘মানুষের টার্গেট সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেল নিতে বেশি মানুষ ভীড় করে। টিসিবি থেকে একজন ডিলারকে ৮০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রির জন্য দেয়া হচ্ছে। আগে ৬০০ লিটার সয়াবিন দেয়া হত।’

এই ডিলার বলেন, পাঁচ থেকে ছয় নারীর একটি দল রয়েছে। তারা প্রতিদিন তেল কিনছে। এতো তেল তো বাড়িতে খাওয়া সম্ভব নয়। তারা বিক্রিও করতে পারে।

নগরীর বিনোদপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেল ১২৮ টাকা লিটার। চিনি ৭৮ ও মসুরের ডাল (দেশি) ১০০ টাকা কেজি।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে- তারা রাজশাহীতে ভ্রামম্যাণ ট্রাকে ডিলারের মাধ্যমে সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা ও মসুরের ডাল ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। এতে দেখা যাচ্ছে, দোকানের এককেজি মসুরের ডালের তুলনায় টিসিবির লাইনে প্রায় দুই কেজি পাওয়া যাবে। তাই মসুরের ডাল ও সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি।

প্রতিদিন একশ্রেণির মানুষ টিসিবির পণ্য নিচ্ছে এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী টিসিবি উর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (অফিস প্রধান) রবিউল মোর্শেদ জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। এক শ্রেণির নারী প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে টিসিবির পণ্য। বিষয়টি রোধে আমরা ঝটিকা পয়েন্ট পরির্বতনের কথা ভাবছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে এই নারীরা একযোগে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন। তারা তেল নিয়ে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে। রোববার (২২ আগস্ট) রাজশাহী সাহেববাজারে এক দোকানে অভিযান পরিচালনা করে ৪৮ লিটার টিসিবির সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এসময় দোকান মালিককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দোকান মালিক আমাদের জানিয়েছেন, তিনি কয়েকজন নারীর থেকে এই তেল কিনেছেন।

স/আ