পুঠিয়ায় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কৃষকের কার্ডে গুদামে ধান দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা

পুঠিয়া প্রতিনিধি:

সারাদেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্য শস্য সংগ্রহ কর্মসুচীর অংশ হিসেবে বোরো মৌসুমে প্রকৃত কৃষকদের ধান গম ও চাল সংগ্রহ করছে সরকার। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে ধান দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

কৃষকের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিত করতে সরকার যে মহৎ উদ্দ্যোগ নিয়েছে তা ভেস্তে যাচ্ছে। তবে নীতিমালা মেনেই ধান সংগ্রহ চলছে বলে দাবী করছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার চলতি বোরো মৌসুমে পুঠিয়া উপজেলায় ২৬ টাকা কেজি দরে ৮৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এরই সুত্র ধরে গত ২০ মে অভ্যন্তরীন খাদ্য শষ্য সংগ্রহের উদ্বোধন করেন পুঠিয়া দুর্গাপুরের সাংসদ প্রফেসর ডাঃ মনসুর রহমান।

উদ্বোধনের পর থেকে ৩০ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৪৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছে খাদ্য গুদামে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষকের কাছে ধান কেনার কথা থাকলেও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের থেকে ধান দিয়ে গুদাম ভরা হয়। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবসালী নেতাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নিন্ম মানের ধান কম দামে কিনে বেশি দামে গুদামে বিক্রি করে।

এতে প্রতিমণ ধানে তিনশ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ টাকা পর্যন্ত কমিশন হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট। তারা জানান, সিন্ডিকেটের বাইরে গুদামে ধান দিতে গেলে ধানে কোন সমস্যা না থাকলেও কৃষকদের হয়রানী করতে নানা ধরনের সমস্যা বের করে কর্মকর্তারা। আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান দিলে কোন কিছুই দেখা হয়না তবে প্রতিমণ ধানে সিন্ডিকেটকে মোটা অংকের কমিশন দিতে হয়।

গত বুধবার (২৯ মে) সকালে কৃষক কার্ড সহ পুঠিয়া উপজেলা খাদ্য গুদামে ধান দিতে গিয়ে ধান দিতে পারেনি কৃষক বুলবুল হোসেন। তার অভিযোগ, তিন টন ধান দেয়ার ব্যপারে কথা বললে তারা নীতিমালা অনুযায়ী ধান নেয়ার কথা জানায় আমার ধানের সবকিছু ঠিক থাকলেও অজ্ঞাত কারনে পরে ধান নিতে রাজি হয়নি।

বুলবুল আহম্মেদ বলেন, উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে গিয়ে উনাকে বিষয়টি খুলে বলার পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, আমার হাত পা বাঁধা আমি ধান নিতে পারবো না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ঠ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ধান সংগ্রহের সময় এলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে পড়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নিতে বাধ্য হয় খাদ্য বিভাগ। কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীরা নিম্ন মানের ধান গুদামে দেয়। ১০ টাকা খরচে খোলা কার্ড ধারীর ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি টাকা চলে যায়। কার্ডধারীর একটি সাক্ষর হলেই ব্যাংক থেকে টাকা তোলা যায়। এতে কাগজে কলমে কোন কিছু ধরার উপায় থাকেনা

কৃষকের কার্ড সংগ্রহের কৌশল সর্ম্পকে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকের কৃষি কার্ড সংগ্রহ করেছে ব্যবসায়ীরা। জিউপাড়া ইউনিয়নের মাসুদ রানা নামের একজন গ্রামের ১০ জন কৃষকের কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ব্যবসায়ী মনিরুল হক বিল্লালকে দিয়েছেন। তবে কৃষকরা জানেনা তাদের নেয়া কার্ড দিয়ে কি হবে।

কার্ড সংগ্রহকারী মাসুদ রানা জানান, মনিরুল হক বিল্লাল গুদামে ধান চাল দিবেন বলে কিছু কৃষি কার্ড চেয়েছিলেন। কৃষি কার্ড হলে গুদামে ধান চাল দেয়া নাকি অনেক সুবিধা আছে। তার কথা শুনে কার্ডগুলো সংগ্রহ করে ব্যবসায়ী বিল্লালকে দিয়েছেন তিনি। কাজ শেষ হলে প্রতিটি কার্ডের ব্যক্তিদেরও তিনি নিজের খরচে ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়া ছাড়াও খরচ দেবে বলেও মাসুদকে জানিয়েছে বিল্লাল।

এ বিষয়ে জানতে মনিরুল হক বিল্লালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহীত মোবাইল নাম্বারে ফোন করেও পাওয়া যায়নি নাম্বারটি বারংবার বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং নীতিমালা মেনেই কৃষকের থেকে ধান সংগ্রহ হচ্ছে দাবী করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বুলবুল নামের ওই কৃষকের বাড়ী পুঠিয়া ইউনিয়নে এই এলাকায় ২ টন বাজেট ছিলো সেটা পূরন হয়ে গেছে আগেই। তাই আমার হাত পা বাঁধা।

সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে কৃষকের কার্ড সংগ্রহ করে ব্যবাসায়ীদের ধান দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ধান সংগ্রহের পর সরাসরি কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পৌছাচ্ছে কিনা আমাদের দায়িত্ব সেটা দেখার।

 

স/আ