পাহাড়ে উৎসবহীন ‘ফুলবিজু’

গঙ্গাদেবীকে ফুল উৎস্বর্গ করে পাহাড়ে শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈসাবির প্রথম দিন অর্থাৎ ‘ফুলবিজু’। আকাশে তখন সূর্য উঠেনি। আবছা আবছা আলোর ঝলকানি দেখা মিলছে তখন। এর আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এক টুকরো কলা পাতায় নানা রঙের ফুল হাতে প্রস্তুত। নিজেদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে রাঙামাটি হ্রদের পাড়ে বসেছে প্রার্থনায়রত। দেশের এ মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য। একই সাথে পুরোন যত গ্লানি মুছে জগতের সুখ-শান্তি কামনা করে হ্রদের জলে ভাসিয়ে দেয় সে পূজার ফুল। এর পর সারা দিনব্যাপী চলে এ ফুলবিজু উৎসব। প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। এভাবে তাদের সারাদিন কেটে যায় আনন্দ উল্লাসে।

তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কোন সংগঠন ফুল বিজুর উৎসবের আয়োজন করেনি। করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্থগিত করা হয় সব আনুষ্ঠানিকতা। তবে নিজেদের মধ্যে সীমিত পরিসরে পালন করা হয় ফুলবিজুর উৎসব। সোমবার সকালে রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা। তবে এবার ত্রিপুরা পল্লীতে তরুণ-তরুণীদের বর্ণাঢ্য সাজে গড়াই নৃর্ত্যসহ, ঘিলা কেলা, বোতল নৃর্ত্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।

মূলত বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বৈসাবির উৎসবপালন করে থাকেন। এ উৎসবকে চাকমারা-বিজু, মারমারা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা- বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা -বিষু এবং অহমিকারা -বিহু বলে আখ্যায়িত করে। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১লা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা দিন হিসেবে তিনব্যাপী উৎসব পালন করে থাকে। কিন্তু এবার করোনার কালো থাবায় স্নান করেছে উৎসবের রঙ।

 

রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা বলেন, আকাশে সূর্য উঠার সাথে হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে ফুলবিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।  হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট, ব্যর্থতা, পাপ আর গ্লানি মোচনের জন্য। অনাগত দিনে জগতের সব প্রাণীর হিত, সুখ, মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি। আর এভাবে নতুন বছরকে বরণ করে নেই। ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে আমাদের তিনদিনের উৎসব শুরু হয়েছে। কিন্তু এবার কোন উৎসবের আয়োজন করা হয়নি। নিজেদের মধ্যে উৎসবের সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়ছে। মানুষ সুস্থ থাকলে বেঁচে থাকলে আগামীর বিজু আরও আনন্দদায়ক হবে।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন