বৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্থিরতা কবে থামবে?

Paris
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুরোদমে চালু করা যায়নি শিক্ষা কার্যক্রম। উপাচার্যসহ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের পদত্যাগ এবং পদগুলোতে নিয়োগ দিতে দেরি হওয়ার মতো কারণে উচ্চশিক্ষায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

আড়াই মাসের বেশি সময় পরও ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নেমেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সবশেষ বুধবার ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এভাবে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে ‘সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব’ পড়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।

তবে শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে বিরতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে গত মঙ্গলবার ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, গত ১২ই অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের পদত্যাগ করেন।

এরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উপাচার্য নিয়োগ না দেয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েক দফায় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দেয়।

সবশেষ ১৭ই সেপ্টেম্বর ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।

এসময় সমাবেশ থেকে ‘ঢাবি, জাবি ভিসি পায়, চবি কেন পিছিয়ে যায়’, ‘আর নয় বিজ্ঞাপন, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’, ‘সবাই যখন স্বর্গে, চবি কেন মর্গে- এমন সব স্লোগান দেয়া হয়।

এসময় দাবি পূরণ না হওয়ায় ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।

পরদিন দুপুরের দিকে নতুন উপাচার্য নিয়োগের ঘোষণা আসার পর তালা খুলে দেয়া হয়।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এখনও তাদের সব দাবি পূরণ হয়নি।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ভিসি ও প্রোভিসি নিয়োগ। গতকাল দুপুরে ভিসির প্রজ্ঞাপন জারির পর আমরা ক্যাম্পাসের ফটকগুলো খুলে দেই। আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছি, কিন্তু দ্রুততম সময়ে প্রোভিসির প্রজ্ঞাপন না আসলে আবারও আন্দোলনে নামবো আমরা।”

উল্লেখ্য, কোরবানি ঈদের ছুটির পর থেকে শিক্ষকদের পেনশন স্কিম এবং পরে কোটা আন্দোলনের মতো বিষয়গুলোর কারণে জুলাইয়ের শুরু থেকেই বন্ধ ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস পরীক্ষা।

গত ১৮ই অগাস্ট থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা এলেও কার্যকর প্রশাসন না থাকায় বিদ্যমান অচলাবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মশিউর রহমান বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ভিসি নির্ভর হয়। ফলে পরীক্ষার বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এখনও শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতে পারেনি। তাদের পড়াশোনার সবকিছু হলে রয়ে গেছে। ফলে এগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।”

নতুন ভিসি নিয়োগ পেলেও কোরবানি ঈদের পর থেকে কোনো ক্লাস না হওয়ায় সেশনজটও কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে সেটি নিয়েও শঙ্কার কথা জানান তিনি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বুধবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শাখাওয়াত হোসেন নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক।

মামলার এজাহার মতে, গত ১১ই জুলাই আসামিরা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, “১৪৩/৩২৩ ৩০৭/১১৪/১০৯ পেনাল কোড এবং ১৯০৮ সনের বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৩/৪ ধারায় মামলা রুজু করা হইলো।”

তবে একটি সূত্র বলছে, মামলার পাঁচ নম্বর আসামি অধ্যাপক রাশিদুল ইসলাম শেখ ঘটনার দিন দেশেই ছিলেন না।

এছাড়াও মামলার ১৫ নম্বর আসামি রাফীউল ইসলাম দিপ্ত দুই বছর আগে সৌদি আরব চলে গেছে। ফলে তারও ঘটনার দিন সেখানে থাকার সুযোগ নেই।

ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই মামলা করা হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম।

মামলায় অভিযুক্ত সাবেক ভিসি ও প্রক্টর এবং শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় সরকারের বিরুদ্ধে তারা কিছু বলেনি এটা সত্য। কিন্তু আমরা যারা সেসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলনে করেছি তাদের কাউকে তারা হয়রানি করে নাই”।

“যেটা করেনি সেটার নামে মামলা দিয়ে তাদের ফাঁসানো- একজন শিক্ষক হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারছি না”, বলেন তিনি।

আসামিদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান সদর দক্ষিণ মডেল থানার অপারেশন ইনচার্জ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

যারা দেশে ছিলেন না তাদের নামে মামলা হবার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখন জাস্ট মামলা হইছে। এটার এখনও তদন্ত হয় নাই। এখন কেউ যদি দেশে না থেকে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে বেরোবি শিক্ষার্থীরা
বুধবার নিয়োগ দেয়া ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্যও ছিলেন।

এর আগে, ১৬ই জুলাই পুলিশের গুলিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু হলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বাসভবন ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে ৯ই অগাস্ট পদত্যাগ করেন উপাচার্য হাসিবুর রশীদ।

পদত্যাগের এক মাসের বেশি সময় পরও নতুন উপাচার্য নিয়োগ না দেয়ায় প্রশাসনে অচলাবস্থা দেখা দেয়।

পরে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

বেরোবি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩-তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিপন আহমেদ বলেন, “পহেলা জুলাই থেকে আমাদের ক্লাস বন্ধ। এখনও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়নি। যেহেতু তিন মাস ধরে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে, আমরা একটা সেশনজটের মধ্যেও পড়ে গেছি।”

তবে শিক্ষকদের সহযোগিতা পেলে ‘পিছিয়ে পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারার’ আশা করছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, আন্দোলনের পর থেকে গত ১৮ই অগাস্ট পর্যন্ত ৩৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেন।

তবে প্রায় এক মাস পর ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।

এতদিনেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু করা গেল না এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাতে ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার (পদের জন্য) উপযুক্ত লোককে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটা ভালোভাবে করার চেষ্টা করছেন বলেই আমার বিশ্বাস একটু সময় লাগছে।”

“কালকে দেখলাম একসাথে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হলো, আমার ধারণা কয়েকদিনের মধ্যেই সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হয়ে যাবে,” বলেন তিনি।

এ মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে জানান ড. ফায়েজ।

বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শুরু হচ্ছে, সাইমুল্টেনাস্লি (একইসঙ্গে) সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই শুরু হবে।”

দেরির কারণ হিসেবে সার্বিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

“একটু দেরি হলেও আমাদের বুঝতে হবে পরিস্থিতি কী ছিল। সেখান থেকে ফিরে আসতে একটু সময় লাগে। শিগগিরই ক্লাস শুরু হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সুন্দর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।”

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - জাতীয়