পাবনায় কেন্দ্রীয় গোরস্থানে কবর জিয়ারত করলেন রাষ্ট্রপতি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

চার দিনের সরকারি সফরে সোমবার দুপুরে নিজ জেলা পাবনায় এসে পৌঁছেছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন। সফরের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি পাবনা জেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধু চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহরের আরিফপুরে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে বাবা-মা এবং আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাকর্মীসহ কবরবাসীর কবর জিয়ারত করেন।

সোমবার দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছান তিনি। এরপর পাবনা সার্কিট হাউসে উপস্থিত হয়ে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন।

সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শীর্ষ নেতারা। এ সময় গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, রাষ্ট্রপতির নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী, রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী, নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির সদস্য সচিব ও রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু প্রফেসর শিবজিত নাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউর রহিম লাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সার্কিট হাউস থেকে রাষ্ট্রপতি দুপুর দেড়টায় কেন্দ্রীয় গোরস্থানের উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার পথে জেলা পরিষদের উদ্যোগে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু চত্বরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকনসহ জেলা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে রাষ্ট্রপতি আরিফপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে যান এবং প্রয়াত বাবা-মার কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তিনি কবরবাসীদের জন্য মোনাজাত করেন। তিনি কিছু সময় গোরস্থানে অবস্থান করেন। রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানাসহ পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় গোরস্থান থেকে রাষ্ট্রপতি স্কয়ার বাগানবাড়ির পারিবারিক কবরস্থান পরিদর্শন করেন।

১৬ মে সকালে পাবনা প্রেস ক্লাবে মতবিনিময় এবং বিকালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ মে সকালে পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন ও শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করে ১৮ মে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

এদিকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে সংবর্ধনা কমিটি আয়োজকরা বলছেন, এটি হবে নির্দলীয় এবং স্মরণকালের বৃহত্তম নাগরিক সংবর্ধনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠাসহ শিক্ষা এবং রাজনীতির হাতেখড়ি পাবনায়। এরপর পাবনাতেই স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাজীবন শেষ করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ও পাবনা আমিন উদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

তৃণমূল থেকে রাজনীতি, শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা ও আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী ছিলেন। বিচারক হিসেবেও তিনি অসামান্য সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে তাকে নগরবাড়ীতে ঐতিহাসিক মুজিব বাঁধ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন শেষে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে যান। এজন্য তাকে নিয়ে পাবনাবাসীর গর্বের শেষ নেই। সর্বশেষ তিনি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো পাবনায় এসেছেন। এতে পাবনাবাসী গর্বিত, আনন্দিত আবেগাপ্লুত।

তার সফরকে ঘিরে পুরো শহরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি, দোকান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-সড়ক মহাসড়ক আলোকসজ্জা এবং ব্যানার ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে শহরের সড়ক ও মহাসড়কে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত হয়েছে পাবনা। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে সর্বত্র।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রপতি আমাদের গৌরব। তার সম্মান রক্ষার্থে আমরা যা যা করণীয় তাই করব। অ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনা স্মরণকালের বৃহত্তম নাগরিক সংবর্ধনা এবং এটি হবে নির্দলীয়। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে একটি আনন্দঘন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শামসুল হক টুকু কয়েক দিন ধরে রাষ্ট্রপতির সফরকে সামনে রেখে পাবনায় অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর এত বড় অর্জনে তিনি আবেগাপ্লুত। তিনি যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতির এই অর্জন এবং তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথমবারের মতো পাবনা সফরকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় দলমত নির্বিশেষে যেন আনন্দ বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় রাষ্ট্রপতির পুরো সফর আনন্দময় ও সফল হবে বলে বিশ্বাস করি। সূত্র: যুগান্তর