পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করল ৫ হাজার মানুষ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙ্গে যায় কয়রা সদরের ২নং কয়রা কপোতাক্ষ নদের বাঁধ। সেটি সংস্কারে সবাই মিলে পানিতে নেমে কাজ করছিলেন। তখনই সময় হল ঈদের নামাজের। কি আর করা! সেই অবস্থাতেই সোমবার বেলা ১১টায় দাঁড়িয়ে গেলেন ঈদের নামাজে। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিতেই আদায় করলেন ঈদের নামাজ।

আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে এবং ঈদের দিনে কাজ করেও ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের পুরোটা মেরামত করা যায়নি। যে কারণে দুঃখ ভরা মন সবাই বাড়ি ফিরেছে। মঙ্গলবারও কাজ করবেন দুর্গতরা। কাজে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ দুপুরে জোয়ারের আগ পর্যন্ত আংশিক বাঁধ মেরামত শেষে খিচুড়ি খেয়ে বাড়ি ফেরেন।

গত ২০ মে আম্পানের আঘাতে কয়রার বেড়িবাঁধের ২৪ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। যার ফলে চারটি ইউনিয়ন লবণ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।

সোমবার ঈদের দিন সকালে প্রায় ৫ হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন মেরামত শুরু করে। বাঁধ মেরামতের একপর্যায়ে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের পশ্চিম পাশে শচিন মণ্ডলের বাড়ির পাশে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের পানির ওপর ঈদুল ফিতরের ২টি জামাতের মাধ্যমে নামাজ আদায় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলামসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ। নামাজে ইমামতি করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিন।

অপরদিকে বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশে পানির মধ্যে ঈদের নামাজ আদায় করেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এখানে ইমামতি করেন কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির।

ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, কয়রার মানুষ বাঁধ মেরামত না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না। কারণ বাঁধ আটকাতে না পারলে লোনা পানির মধ্যে বসবাস করা কঠিন হবে। কয়রার মানুষ এখন ত্রাণ চায় না, বাঁধ চায়। তাই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও তাদের পেটে দানা পানি প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ সেটুকুর জোগান দিয়ে লোনাপানিতে বিধ্বস্ত মানুষদের উৎসাহ দিচ্ছেন।

দক্ষিণ বেদকাশীর বাসিন্দা আবু সাঈদ খান বলেন, আইলায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মানুষ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু আম্পানে ঘর বাড়ি, বাঁধ সবই গেছে। তাই মানুষের ন্যূনতম আশ্রয় নেওয়ার অবস্থাও নেই। বাধ্য হয়ে এখন মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে আগে বাঁধ নির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাদা জলে নেমে পড়েছেন।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছে। আম্পানের আঘাতে সেই যুদ্ধ আবার নতুনভাবে শুরু করতে হল।

তিনি বলেন, দুপুরে জোয়ারের আগ পর্যন্ত আংশিক বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। মঙ্গলবার আবারো মেরামত করা হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে এখন কয়রার মানুষকে এত ভোগান্তি পোহাতে হত না।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এখন আম্পানে বিধ্বস্ত হয়ে আরও মুখ থুবড়ে পড়েছে। কয়রার ৪টি ইউনিয়নে সমগ্র এলাকা লোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রাবাসীর প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন কয়রাসহ উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এখানে ভালো ফসল হয়, মাছ চাষ হয়। টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে কয়রার মানুষের আর ত্রাণের দরকার হবে না।

 

সুত্রঃ যুগান্তর