পশু প্রেমে দৃষ্টান্ত স্থাপন নিঃসঙ্গ নারীর, নাম ‘বিলাই দাদি’

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ফরিদা বেওয়ার জীবের প্রতি অপার ভালবাসা। পশু প্রেমে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন এই নারী। স্বামী-সন্তান, অর্থবিত্ত সবকিছু হারিয়ে হয়েছেন নিঃসঙ্গ। এখন বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালকে হৃদয়ের সকল স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে আকড়ে ধরে আছেন।

জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে কর্মজীবন হিসেবে বেছে নেওয়া হোটেলের দিনমজুরের কাজে উপার্জিত অর্থের বেশির ভাগ অংশই তিনি ব্যয় করেন কুকুর-বিড়ালের খাদ্য যোগানে। পশুপাখির উপর তার মায়া বেশি, তাই কুকুর-বিড়ালইকেই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এভাবেই ভালোবেসে আসছেন তিনি।

ফরিদা বেওয়া (৫৮) নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরশহরের হাতিখানা মহল্লার রেল লাইনের ধারের বস্তির জরাজীর্ণ একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। পেশায় তিনি একজন হোটেল শ্রমিক। স্বামী আর দুই সন্তান হারিয়ে পথের বেওয়ারিশ কুকুর আর বিড়ালই এখন তার নিঃস্ব জীবনের সঙ্গী। ২০ বছর ধরে নিজের উপার্জনে অধিকাংশ অর্থ দিয়ে খাবার তুলে দিচ্ছেন বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের মুখে। প্রকৃতি আর পশুর প্রতি ভালোবাসাই বাঁচার সাহস জুগিয়েছে তাকে। কুকুর-বিড়ালদের নিয়েই পরিবার এখন ফরিদা বেওয়ার।

 

ফরিদা বেওয়া বলেন, দিনমজুরি করে আয়ের টাকায় প্রতিদিন বাজার থেকে মাছ-মাংস কিনে নিজে রান্না করে এলাকার বেওয়ারিশ কুকুর আর বিড়ালের মুখে সেই খাবার তুলে দেন তিনি।

কুকুর-বিড়ালের প্রতি এমন স্নেহ-মমতার কারণে এলাকার মানুষ ফরিদা বেওয়ার নাম দিয়েছেন ‘বিলাই দাদি’। সমাজকমী নওশাদ আনছারী বলেন, প্রতিদিন খাবার হাতে নিয়ে একটি ডাক দিলেই হাজির হয় বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। প্রতিটি কুকুরের সামনে এক এক করে পাত্রে বেড়ে দেন রান্না করা খাবার আর সুশ্ঙ্খৃলভাবে সেই খাবার খাই কুকুরগুলো। পশুর প্রতি ফরিদার মতো এমন স্নেহ মমতা আর দেখননি তারা।

নীলফামারী পলাশবাড়ি কলেজের প্রভাষক মো.জাফর সাদেক বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রাণিকূল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যরের প্রভাব এর ভিতরে নিহিত।

নীলফামারীর সৈয়দপুর সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পশুপ্রেমের প্রতি এমন দৃষ্টান্ত আর কেউ এভাবে দেখাতে পারেনি। স্থায়ীভাবে একটু মাথা গোজার ঠাঁইয়ের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মেলনি সহযোগিতা। তাই দ্রুত তাকে স্থায়ীভাবে একটি মাথা গোজার ঠাঁই দেওয়ার দাবি জানালেন এই সমাজকর্মী।

 

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন