পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা সৈকত, ৪০ ভাগ ছাড়ে রুম বুকিং

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র এখন মুখরিত। চিরচেনা রূপে ফিরেছে এই সমুদ্রসৈকত। গত চার মাসে সাগরকন্যার এমন রূপ দেখেনি কেউ। ঈদ-পরবর্তী কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। করোনাভাইরাসের দুর্যোগ পেছনে ফেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে এখন মুখর সাগরকন্যা।

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঈদের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) হাজার হাজার পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়ে মিলনমেলায় রূপ নেয় কুয়াকাটা। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৈকতে হৈ-হুল্লোড়, গোসল, দৌড়ঝাঁপ ও আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা। পূর্ণিমার জোঁ থাকায় উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালিতে মাতোয়ারা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা যায়, নেচে-গেয়ে দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি মানুষগুলো মিলিত হয়েছেন প্রাণের স্পন্দনে। সব কিছুই মিলিয়ে দীর্ঘদিনের সুনসান নিরব পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পুনরায় ফিরে পেয়েছে পূর্ণতা। সৈকতের দর্শনীয় স্থানগুলো বাইকে ঘুরে দেখছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

Sea-Beach-2

ওয়াটার বাইক নিয়ে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য রোমাঞ্চকর। পর্যটকদের এসব দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈকতে নতুন যুক্ত হওয়া ঘোড়ার গাড়িতে শিশু ও বয়স্করা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে সমুদ্র ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকন করছেন। কেউ কেউ চার চাকার বিচ বাইক নিয়ে জলকেলিতে মিলিত হয়েছেন। সমুদ্রের সান্নিধ্যে এসে বুকভরা নিশ্বাস নিতে পেরে খুশি পর্যটকরা।

পাশাপাশি সুন্দরবনের পূর্বাংশ টেংরাগিরি বনাঞ্চল, লেম্বুর বন, গঙ্গামতির লেক, জাতীয় উদ্যান, লাল কাঁকড়ার চর, বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইন পল্লীতে অসংখ্য পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। তবে তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে এসেছেন।

আবাসিক হোটেল-মোটেলে রয়েছে চাহিদা মাফিক বুকিং। বেচাকেনা বেড়েছে খাবার হোটেল, শামুক ও ঝিনুকের দোকান, শুঁটকি মাকের্ট, বার্মিজ পণ্যসহ পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।

Sea-Beach-3

করোনার প্রার্দুভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এই প্রথম পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে কুয়াকাটায়- এমনটি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সমুদ্রের আসল রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়া উচিত বলে মনে করছেন আব্দুর রব সেরেনিয়াবাদ বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।

ঢাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে মোটরবাইকযোগে সোমবার (০৩ আগস্ট) বিকেলে কুয়াকাটায় এসেছেন আফজালুল আহম্মেদ টিপু। উঠেছেন আবাসিক হোটেল রেইন ড্রপে। সমুদ্র ভ্রমণের জন্য তারা বর্ষা মৌসুমকে প্রধান্য দেন।

আফজালুল আহম্মেদ টিপু বলেন, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ও গর্জন আমাদের বিমোহিত করে। তাই ঈদের ছুটি উপভোগ করতে কুয়াকাটা সৈকতকে বেছে নিয়েছি আমরা।

Sea-Beach-3

সমুদ্র লাগোয়া আবাসিক হোটেল সৈকতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, ঈদের দিন থেকে পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছেন। রোববার থেকে ধারাবাহিকভাবে বুধবার পর্যন্ত আমার হোটেলের শতভাগ রুমই বুকিং আছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে অধিকাংশ পর্যটক এসি রুম ভাড়া নিয়েছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী এমএ মোতালেব শরিফ বলেন, পর্যটকদের কুয়াকাটায় টানতে ৩০-৪০ ভাগ ছাড়ে রুম বুকিং দেয়া হয়। এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্তে প্রত্যেক আবাসিক হোটেলে আশানুরূপ রুম বুকিং হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে করোনাকালীন লোকসান পুষিয়ে অচিরেই লাভের মুখ দেখবেন ব্যবসায়ীরা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ পরবর্তী কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তাদের নিরাপত্তায় দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের সেবা অব্যাহত রাখতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।