পরীমনির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক

চিত্রনায়িকা পরীমনি নানা কারণেই আলোচিত-বিতর্কিত হয়েছেন। মাত্র তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে। আবেগের বসে সেই বিয়ের স্থায়ীত্ব হয় মাত্র ৫ মাস।

এর আগে একটি পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিকের সঙ্গে বাগদান সারেন পরী। একটা সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে তার বিয়ের খবরের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তখন অবশ্য ওই বিয়ের ব্যাপারে মুখ খোলেননি তিনি।

তবে মিডিয়াতে নাম লেখানোর আগেও পরী গ্রামে থাকাকালীন সময়েও বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়। তার সেই স্বামী ছিলেন একজন ফুটবলার। তার নাম ফেরদৌস কবীর সৌরভ। বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। তিন বছর প্রেম করার পর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরী ও সৌরভের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকে। তখন বিয়ের কাবিননামার একটি কপিও ভাইরাল হয়।

এর আগে ভোলার ইসমাইল নামে এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথাও শোনা যায়। তবে সেই বিয়েও বেশি দিন টিকেনি। ওই সময় ইসমাইল ও পরীমনির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এ ছাড়া ছবির শুটিংয়ের সিডিউল ফাঁসাতেন পরীমনি। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সখ্যতার কারণে পরিচালক-প্রযোজকরাও নায়িকার নানা অন্যায় আবদার সহ্য করতেন।

এদিকে চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার পর সিসিটিভির ফুটেজ বাইরে আসে। সেখানে দেখা যায় পরীমণি স্বেচ্ছায় সঙ্গীদের নিয়ে মদ পান করছেন।

এর কদিন পর নায়িকার বিরুদ্ধে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব ও বনানী ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে। সেসব ফুটেজ সামনে আসার পর পরীকে গ্রেপ্তাদের দাবি করেন অনেকেই। উচ্চবিত্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন ভালোবাসা সীমাহীন ছবির নায়িকা। কাউকে তোয়াক্কা করতেন না।

বুধবার বিকালে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে প্রথম দিকে নায়িকা র‍্যাবকে সহযোগিতা করেননি। পরে পরে তার ঘর তল্লাশি করে ফ্ল্যাটের কেবিনেট থেকে বিদেশি মদ, এলএসডি ও আইস উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে তার ড্রয়িং রুমের কাভার্ড, শো-কেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুল সংখ্যক মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, পরীমনির আলিশান বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মদ নেই। তার কাছে দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণে ওয়াইন, ভয়ংকর মাদক আইস, এলএসডি ও মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিযানের আগে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসা ঘিরে রাখে, তখনই তিনি ফেসবুকে লাইভে আসেন। নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে লাইভে এসে বাঁচার জন্য পরিচিতজনদের কাছে আকুতি জানান। যদিও সেই সময় তিনি দাবি করেন, পুলিশ পরিচয়ে তার বাসায় অন্য কেউ হামলা চালাচ্ছেন।

লাইভে থেকেই তিনি পরিচিত কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন দেন। পাশাপাশি তিনি বনানী থানায়ও ফোন দেন।এ সময় নিজেকে বাঁচাতে কান্নাকাটি করেন।

লাইভে তিনি বলেন, আমি মরব আর কেউ কিছু বলবে না? মরতে তো একদিন হবেই। আমি এই লাইভ কাটব না। যতক্ষণ না থানা থেকে পুলিশ আসবে, মিডিয়া আসবে ততক্ষণ লাইভ চলবে। ভাই আপনারা কেউ বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা? এইখানে কাছেই থানা। অথচ তারা আসছে না। আমার তো তাদের হেল্প লাগবে।  তিনদিন ধরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। আমার পরিচিতরা কই। একটু আসবেন দেখবেন? এরা কারা? ভাঙচুর করছে। এসব আল্লাহ সহ্য করবে না। আপনারা কত মানুষ এই লাইভ দেখছেন। কেউ কিছু বলছেন না। আমার বাসায় আমার বুড়ো নানা এসেছেন। আপানারা মিডিয়ার কেউ আসবেন? আমি তো মরে যাচ্ছি।

লাইভে দেখা যায়, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর দরজা খুলেছেন। ততক্ষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাসার সবার মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। পাশাপাশি পরীমনির লাইভ বন্ধ করার জন্য বলেন। পরে তিনি লাইভ বন্ধ করেন।

গত জুন মাসে রাজধানীর একটি ক্লাবে পরীমনিকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে নাসির ইউ আহমেদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগও তিনি ফেসবুক লাইভে এসে জানান। এরপর তা আমলে নেয় প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে পরীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। যদিও প্রধান অভিযুক্ত নাসির গ্রেফতারের কয়েক দিন পরই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

সূত্র: যুগান্তর