পরিশ্রম ও চেষ্টায় সফল রাজশাহীর রিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পবা উপজেলার রিনা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। বাবার অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতো। সেই বয়সেই তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। এক বছর পর কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান, পরের বছরই হঠাৎ তার স্বামী মারা গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। রিনা গিয়ে আশ্রয় নেন তার ভাইয়ের ঘরের বারান্দায়। এভাবে খোলা জায়গায় থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উপায় ছিল না তার। অন্যের বাড়িতে, রাস্তায় কাজ করে ভাইয়ের বারান্দায় রাত্রিযাপন করেই চলছিল জীবন। বয়সেই মেয়ের পনের বছর হতেই বিয়ে দিয়ে দেন।
২০১৯ সালে ব্র্যাকের ইউপিজি প্রোগ্রামে (দারুশা, পবা শাখা) রিনাকে সদস্য হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং তার পছন্দানুযায়ী বকনা গরু পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে সম্পদ হস্তান্তর করা হয়। এরপর তার ভাইও তাকে আর বাড়িতে রাখতে চায় না। তাই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে বাঁধের পাশে এক শতাংশ জায়গা নিয়ে থাকতে শুরু করেন রিনা। প্রোগ্রাম থেকে প্রদত্ত গরুটিও সেখানে পালতে শুরু করেন।
শুরু হয় নতুন সমস্যা- আশপাশের লোকজন গরু বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে সামাজিক শক্তি কমিটির মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়। কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারিসহ অন্যান্য সদস্য রিনাকে নিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন। চেয়ারম্যান রিনার  নিরাপত্তা দেন।
মাস দুয়েক পর গরুর গোবর বিক্রি করে এবং অন্যের বাড়িতে, রাস্তায় কাজ করার টাকা জমিয়ে পাঁচটি মুরগী কিনেন এবং একটি ছাগল বন্ধক নেন তিনি। পরে মুরগি ও ডিম বিক্রি করে হাঁস কেনেন। ইতিমধ্যে তার গরুটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। গরুর দুধ, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল থেকে তার যে আয় হয় তা থেকে টাকা জমিয়ে কিছুদিন আগে রিনা ১৫ হাজার টাকায় ১৫ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়েছেন। সেখানে ফসল আবাদ শুরু করেছেন।
বর্তমানে ২টি গরু, ১টি ছাগল, ২০টি মুরগি আছে রিনার। বন্ধক নেওয়া  ১৫ শতাংশ জমি তো আছেই। এখন আর তার অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হয় না। নিজের সন্তানের মতো গরু, ছাগল, মুরগির দেখভাল করেন তিনি। রিনা স্বপ্ন দেখেন নিজের একটা সুন্দর বাড়ির। সে লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে চলেছেন।