পবায় ১৪ বছর ধরে গৃহবর্ধূকে ধর্ষণের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভোন দেখিয়ে ১৪ বছর ধরে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ(আরএমপি)র কর্নহার থানায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ রুমানা খাতুন (৩০) বিচার চেয়ে একটি লিখিতি অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজ পবা দর্শনপাড়া ইউনিয়নের তিশলাই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসিন আলীর ছেলে।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী গৃহবধূ রুমানা খাতুনের ভাষ্য মতে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে রুমানা খাতুন তার ভালোবাসার স্বীকৃতি পাবার জন্য পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজের কাছে যায়। চেয়ারম্যান রাজ বুঝতে পারে তার কু-কৃর্তী সকলে জেনে যাবে, সে কারনে নিজেকে আড়াল করতে গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ সময় ভুক্তভোগী গৃহবধূ রুমা খাতুন ভালোবাসার স্বীকৃতি পাবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কান্নাকাটি করা শুরু করে। পরে চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজের ফোনে কর্নহার থানা পুলিশ তাকে তার ভালোবাসার স্বীকৃতি পাওয়িয়ে দিবে মর্মে কর্নহার থানায় নিয়ে যায়। পরে একটি লিখিত অভিযোগ করলেও সেই অভিযোগটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছেই রয়ে যায় বলে জানান ভুক্তভোগী গৃহবধূ রুমানা খাতুন।

ভুক্তভোগী আরো বলেন, ২০০৫ সাল থেকে একটি স্কুলে বর্তমান চেয়ারম্যান রাজের সাথে আমার সর্ম্পক হয়। তিনি নিজেকে অবিবাহিত বলে আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেন, আমি তার কথায় বিশ্বাস করে তার ভালোবাসার প্রস্তাবে রাজি হই। এই ভালোবাসাকে পুঁজি করে বিয়ে করার আস্বাস দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, তার বন্ধু বান্ধবীর বাসা ও লক্ষীপুরের পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পাশে আবস্থিত তার তিনতলা বাসায় নিয়ে গিয়ে একাধিকবার আমাকে তার সাথে শারিরীক মিলমিশা করতে বাধ্য করে। এর পর থেকে আমি তাকে বিয়ের কাথা বললে তিনি পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে পরে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেন। আমি তার কথায় শরল বিশ্বাসে অপেক্ষা করি।

কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি আমাকে আমার পরিবারের সাথে কথা বলে বারইহাটি গ্রামের আনারুল ইসলামের সাথে আমার বিয়ে দেয়। আমি সকল কিছু মেনে নিয়ে স্বামীর সংসার করি তাতেই খান্ত হয়নি নারী লোভী চেয়ারম্যান রাজ।

ভুক্তভোগী বলেন, চেয়ারম্যান রাজ আবারো আগের শারিরীক মিলামেশার কিছু ভিডিও রয়ে গেছে সেগুলো আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিবো বলে ভয় দেখালে, আমি ভয়ে তার কথায় রাজি হয়ে তার জীবনে ফিরে আসি। এতে করে তিনি আমাকে আশ্বাস দেন বাড়ী করে দিবেন ব্যাংক একাউন্টে টাকা দিবেন। এ বলে তিনি প্রতি মাসে আমাকে ৫-৭ হাজার টাকা দিতেন আমার বিকাশে। গত ২০২০ সালের জানুযারি মাস থেকে আমাকে কোন খারচ দেন না এবং আমার ফোনে কথা বলে কিন্তু যোগাযোগ হয় না। এদিকে, এ সর্ম্পকের কথা কাউকে বললে পুলিশী বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেয়া হয় বলেও তিনি জানান।

এবিষয়ে ওই গৃহবধূর ভাই হাবিব জানান, আমার বোনের সাথে চেয়ারম্যানের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী সিমা ও মাকে জানানো হয়েছে এবং তারাও দীর্ঘ দিন ধরে অবগত আছে। এ নিয়ে আমার বোনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

চেয়ারম্যান কামরুল হাসান এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কয়েকবার ফোন রিসিভ না করে পরে ফোন বন্ধ করে দেয় তিনি।

জানতে চাইলে কর্ণহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলী তুহিন  বলেন, গৃহবধূ (৩০) বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওসি।

উল্লেখ্য, এর আগেও এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান রাজের বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার নামে মায়েদের কুপ্রস্তাব দেয়াসহ মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রস্তুতে অনিয়ম ও বৈষম্যকরণের অভিযোগ উঠেছিলো। শুধু এমনই নয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ত্রাণ না পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান ইউনিয়নের দর্শনপাড়ার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বোরহানুল ইসলাম মিলন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মিলে তাকে পিটিয়ে তাকেসহ তার ভাই বাবু মুন্নাকেও পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এই চেয়ারম্যান রাজ।

স/অ