পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাচ্ছে কোরিয়ান কোম্পানি

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)।’ এই লক্ষ্যে সরাসরি ক্রয়-পদ্ধতিতে সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।  বুধবার (১২ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব‌্য সভায় প্রস্তাবটি তোলা হবে।  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ‌্য জানা গেছে।

জি-টু-জি ভিত্তিতে এই সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়া হবে।  অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হলে সংস্থাটির সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সড়ক অবকাঠামো-মূলক প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। এরফলে সেতুর ৪ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।  প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। যথাসময়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে মন্ত্রণালয় আশা করছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সমাপ্তির পর সেতুটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কেইসি-কে দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয় ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠি অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইআরডি সেতু বিভাগকে অনুরোধ জানায়। সেতু বিভাগের অনুরোধে কেইসি তাদের সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার তথ্য সেতু বিভাগে দাখিল করে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজের জন্য কেইসির সঙ্গে গত ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আর্থিক সংশ্লেষণও পরিপালনের বাধ্যবাধকতাবিহীন শর্তে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।  পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে কেইসির কারিগরি প্রস্তাব অনুমোদনের পর পরিচালনা ও রক্ষণবেক্ষণ (ও অ্যান্ডএম) ম্যানুয়ালের ভিত্তিতে আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করবে।  ইতোমধ্যে কেইসি তাদের কারিগরি প্রস্তাব দাখিল করেছে।

কেইসি’র দাখিল করা কারিগরি প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কেইসি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান।  এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কোরিয়ার ৪ হাজার ১১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে।  কেইসি এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও ৪ হাজার ৫০৮টি সেতু রক্ষাণাবেক্ষণ করছে।  যার মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৩২ কিলোমিটার।  প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টিলিজেন্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইসিএস) অনুসরণ করছে। টোল আদায়ে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস) ব্যবহার করছে।

পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণে কেইসি আধুনিক প্রযুক্তির সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করবে। এই পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেতুর বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেবে।  সে অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।  সড়ক, সেতু বা এর আওতাধীন অন্য যেকোনো অবস্থানের বিদ্যমান যানবাহন সংক্রান্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন অ্যাপ্লিকেশন চাল করবে।  স্বয়ংক্রিয়ভাবে  অবস্থান জানার জন্য রিয়াল টাইম রোড পেভমেন্ট ড্যামেজ ডিটেকশন চালু করবে।  স্বয়ংক্রিয় ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) ব্যবস্থা চালু করবে।   এছাড়া সেতুর ইনস্পেকশনের ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার করবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের সালের জুন নাগাদ পদ্মা বহুমুখী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স সার্ভিস প্রোভাডাইর  চূড়ান্ত করার প্রয়োজনেই কেইসি’র মাধ্যমে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।