পদ্মার ভাঙ্গনে পা হারিয়েছেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জয়নাল

জেসমিন আরা ফেরদৌস:
জন্ম থেকেই শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী জয়নাল আবেদীন(৬০)। তবুও এই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছিলেন তিনি৷ কিন্তু হায়! ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! পদ্মার ভাঙ্গন তার কাছ থেকে এই অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে৷ নদীভাঙ্গনে পা হারিয়ে দেড় মাস যাবত শয্যাশায়ী হয়ে আছেন তিনি।

জয়নাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের বাসিন্দা৷ পাঁচ সন্তানের জনক তিনি৷ তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এখন ছোট দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার৷ বড় ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করতো সে এখন কাজ হারিয়ে নিজ বাসায় বসে আছে।

তার স্ত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘৪০ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের নিজস্ব কোন জমি-জমা নেয়। আমার স্বামী কথা বলতে ও কানে শুনতে না পারায় ভালো কোন কাজ পায়না৷ অন্যের জমিতেই চাষ করে তা দিয়ে যা পেতাম তা দিয়েই সংসার চলে যেত। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে পা হারিয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী।’

হেনা বেগম আরও বলেন, দেড় মাস আগে আমার স্বামী নদীভাঙ্গনের সময় নদী দেখতে গেছিলো। সে সময় নদীর পাশে কয়েকটি বাচ্চা খেলছিলো। তাদেরকে বাঁচাতে যেয়ে নদীর পাশের একটি দেয়াল তার ওপর ভেঙে পড়ছে তা খেয়াল করতে পারেননি তিনি। যার ফলে দেয়ালটি ভেঙে তিনি তার নিচে চাপা পড়েন৷ গ্রামবাসী খবর দিলে আমি সেখানে ছুটে যায়। প্রথমে সবাই ভেবেছিলো তিনি মারা গেছেন। কিন্তু ভাঙ্গা দেয়াল সরিয়ে তাকে সেখান থেকে জীবীত বের করা গেলেও তার পা কয়েক টুকরো হয়ে ভেঙে যায়।

প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে আমার স্বামীকে নিয়ে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে যায়। সেখানে ডাক্তাররা বলেন উনার চিকিৎসা করতে দুই-আড়াই লাখ টাকা লাগবে৷ আমরা গরীব মানুষ,এত টাকা কই পাবো? তাই সেখান থেকে গ্রামের এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায় উনাকে। সেখানে কবিরাজ তাকে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া দিয়ে ভাঙ্গা জায়গা বেঁধে দেন। তখন থেকে তিনি এ অবস্থাতেই বিছানায় শুয়ে আছেন। কোন রকম উন্নতি দেখতে পাইনা আমি।

বর্তমানে সংসার কীভাবে চলছে-এমন প্রশ্ন করলে হেনা বলেন, আমার বড় ছেলে আগে ঢাকায় কাজ করতো কিন্তু বাপের এ অবস্থা শুনে বাড়িতে এসে সে আর কাজে যায়নি৷ এখন আমাকেই আমার সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। মানুষের গরু পুষে এবং কাঁথা সেলাই করে কোনরকমে আমি আমার সংসার চালাচ্ছি।’

জেএ/এফ