পদ্মার করাল থাবায় সর্বহারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্ধশতাধিক পরিবার

জেসমিন আরা ফেরদৌস:
প্রমত্তা পদ্মার কোল ঘেঁষে অবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম গোয়ালডুবি। নদী মাতৃকার আশীর্বাদ থাকায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই জীবীকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ করে ও মাছ ধরে । কিন্তু এই আশীর্বাদ কখনো কখনো রুপ নেয় অভিশাপে। নদীর পানি বেড়ে গেলে এই পদ্মায়ই হয়ে উঠে বিধ্বংসী। এ বছরও পদ্মার এই করাল থাবা থেকে মুক্তি পায়নি গোয়ালডুবিবাসীরা। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বহারা হয়েছেন ৫৮টি পরিবার।

শুক্রবার( ২৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

পদ্মার এই করাল গ্রাসের শিকার হেনা বেগম।নদী ভাঙ্গনে তার বাকপ্রতিবন্ধি স্বামীর পা ভেঙে যাওয়ায় শয্যাশায়ী হয়ে আছেন তিনি। হেনা বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনের সময় আমার স্বামী নদীর পাশেই ছিলো। এ সময় একটি দেয়াল ভেঙে তার ওপর পড়লে তিনি তার নিচে চাপা পড়েন। সেখান থেকে জীবীত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তার এক পা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন যা আমাদের নাই। তাই কোন রকমে কবিরাজি চিকিৎসায় তাকে সু্স্থ করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অক্ষম হয়ে পড়ায় সংসার এখন আমাকেই দেখতে হচ্ছে। পেটের দায়ে কাঁথা সেলাই করে ৩ সন্তান নিয়ে কোন রকমে সংসার চালাই। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও পদ্মায় চলে যাই।’

আরও এক ভুক্তভোগী রহমত মিয়া। পেশায় তিনি একজন কৃষক। তিনি সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘আমার প্রায় ৫০ বিঘা জমি ছিলো। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে ভালোই দিন চলতো আমার। কিন্তু এই পদ্মা আমার সর্বনাশ করে দিলো। আমার জমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আগের দিন মাঠে কাজ করে এসেছি ৷পরের দিন ফজরের নামাজ পড়ে সেখানে গিয়ে আমি আর কিছু দেখতে পাইনি। তার কয়দিন পর আমার বাড়িও চলে যায় নদীগর্ভে৷ এখন আমার আশ্রয় নেবারও জায়গা নেই। স্ত্রী,সন্তান নিয়ে কলমিলতার মতো এখানে-সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছি আমি। দু বেলা দুমোঠো ভাতের জোগাড় করাও আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

গোয়ালডুবির আরো এক বাসিন্দা রুমা বেগম। তিনি জানান, নদী ভাঙ্গনের আগের দিন আমি আমার বাপের বাড়ি গেছিলাম। পরের দিন এসে আমি আর আমার নিজের বাড়িই চিনতে পারিনা। চারদিন চুলায় আগুন জ্বালাতে পারিনি। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনপার করতে হয়েছে আমাদের। এখন বাঁশ ও বেড়া দিয়ে মাথার ওপর ছাদ তুলে আছি। কিন্তু জানিনা আল্লাহ কতদিন এটা রেখেছে। প্রতিদিন যেভাবে নদী ভাঙ্গছে কবে বলে আমরাসহ আমাদের এই শেষ আশ্রয়টাও নদীর ভেতরে চলে যায়।

এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের কাছে তার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি জেলা প্রশাসকের কাছে এই ৫৮টি পরিবারের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি দরখাস্ত পাঠিয়েছি।এলাকার যেসব বাস্তুহারা লোকজন রয়েছেন তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য টিনেরও আবেদন করেছি। জেলা প্রশাসক আমাদের সাহায্য করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে এসব গৃহহীনদের ত্রান দেওয়া হয়েছে।’

প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল জানান, এলাকাবাসীরা এখানে একটা স্থায়ী সমাধান চায়। গ্রামের আর কোন বাড়ি যেন না ডুবে যায় সে জন্য এখানে বেড়িবাঁধ নির্মান করা প্রয়োজন।তবে বাঁধ নির্মানের জন্য অনেক আগেই ব্লক তৈরি করা হলেও এখনো বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু হয়নি। এই গ্রাম এবং গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসন দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করছি।

জেএ/এফ