নড়াইলে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতের ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ প্রত্যাহার

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে সদর থানার মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

একই ঘটনায় এর আগে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবিরকেও প্রত্যাহার করা হয়। জেলা পুলিশের এক আদেশে রোববার (৩ জুলাই) বিকালে এসআই শেখ মোরছালিনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে রোববার সকালে নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবিরকেও থানা থেকে প্রত্যাহার করে খুলনা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়। ওসি শওকত কবির এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন।

এদিকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ও সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নড়াইল জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযান পরিচালনা করে যশোরের মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে নড়াইলে নিয়ে আসা হয়।

গ্রেফতার হওয়া নূর-নবী (৩৭) সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের কারিগর পাড়ার মৃত ফয়েজ চৌকিদারের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন নূর-নবী খুবই বেপরোয়া ছিলেন। তাকে সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছিল। ওই রাতেই তাকে সদর থানায় নেওয়া হলে সোমবার আদালতে পাঠিয়েছেন পুলিশ। এ নিয়ে মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ৫ জন।

এর আগে গ্রেফতার হওয়া চার আসামির প্রত্যেকের রোববার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করার পর সোমবার তাদের রিমান্ড শুরু হয়েছে। তারা হলেন- সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ওরফে রুবেল (২৭), মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাওন খান (২৮) ও ইজিবাইকচালক সৈয়দ রিমন আলী (২২) এবং খুলনার সরকারি বিএল কলেজে স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র রুখালি গ্রামের বাসিন্দা রহমতুল্লাহ বিশ্বাস রনি (২৪)।

এর আগে গত ১৭ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পুলিশ পাহারায় বিকাল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। এ সময় অধ্যক্ষ স্বপন হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে ওই অবস্থায় তাকে তুলে নেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের সামনে অধ্যক্ষেও এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা আর প্রতিবাদ সমাবেশ করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে। জুতার মালা পরানোর লাঞ্ছিত করার সেই ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ জন আজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর ওইদিন রাতেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে আটক করে পুলিশ।

জানতে চাইলে এসব বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করে নড়াইল সদর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহামুদুর রহমান বলেন, মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক শেখ মোরছালিনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে বর্তমানে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে যশোর থেকে এক আসামিকে গ্রেফতার করে নড়াইলে নিয়ে এসে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর