উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের এই রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন। শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হন। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী প্রেস ব্রিফিয়েং জানান, রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ এর সময় ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও তিনজন বাংলাদেশি বলে জানানো হয়।
নিহতদের মধ্যে ৭ জন জাপানি বলে নিশ্চিত করেছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে নিহতদের ৯ জন ইতালীয় নাগরিক। এছাড়া নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয় এবং তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন।
জাপান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত নাগরিকদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ এবং দুইজন নারী রয়েছেন। তবে চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন নিহতদের সাতজনই উন্নয়ন সংস্থা জাইকার একটি প্রকল্পের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছিলেন।
তবে জাপানের সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমসে নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন- কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালের কর্মী কোয়ো ওগাসাওয়ারা, আলমেক করপোরেশনের কর্মী মাকোতো ওকামুরা, আলমেক করপোরেশনের কর্মী ইউকো সাকাই এবং আলমেক করপোরেশনের আরেক কর্মী রুই শিমোদারিয়া। বাকি তিনজন ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল এর হয়ে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে জাপান টাইমস।
নিহতদের নাম প্রকাশ করেছে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। এরা হলেন- একটি ব্রিটিশ ফার্মের বাংলাদেশ শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদিয়া বেনেদিত্তো, সুইস বংশোদ্ভূত ভিনসেনজো দ আলেস্ত্রো,ক্লথিং ও টেক্সটাইল ব্যবসায় কর্মরত ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা। ঘটনার সময় তার স্বামী গিয়ানি বসচেত্তি রেস্টুরেন্টের বাগানে ফোনে কথা বলতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। একই ঘটনায় নিহত হন টেক্সটাইল ফার্মের কর্মী সিমোনা মন্টি। তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শিগগিরই মেডিক্যাল চেকআপের জন্য তার ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। নিহতদের আরেকজন হলেন তিন বছর বয়সী শিশুর মা মারিয়া রিবোলি। টেক্সটাইল ব্যবসার কাজে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। বাকি নিহতরা হলেন আডেলে পুগলিসি, ক্লদিও চাপেলি, ক্রিস্টিয়ান রোসিস ও মারকো তোনডাট। তারাও গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন বলে জানানো হয়েছে।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার সময় ওই রেস্টুরেন্টে ১০ ইতালীয় নাগরিক অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। আর বাকি ৯ জনকে হত্যা করা হয়।
নিহত ভারতীয় নাগরিক হলেন তারিশা জেইন। তার বাবা ঢাকায় ব্যবসা করতেন। আর সেকারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষার্থী তারিশা ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। হামলায় নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে এলিগেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের মেয়ে অবিন্তা কবিরের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছিল। অন্য দুজন হলেন-ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন ও ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানব সম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ। ফারাজও যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতেন।
এদিকে গুলশানের আর্টিজান রেস্ট্ররেন্টে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি খুবই জঘন্য এবং ভিরু চিত্তের হামলা।’ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
হামলার নিন্দা জানিয়ে আলাদা করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এ অপরাধের নেপথ্যের লোকদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে। সূত্র: জাপান টাইমস, নিউ ইয়র্ক টাইম, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন