সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নজরদারি (মনিটর) করবে সরকারের টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এ মাসের শেষ নাগাদ এ-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শেষ হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নজরদারির জন্য দরকারি যন্ত্রপাতি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এগুলো আসবে আকাশপথে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্লগ ও ওয়েবসাইট মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেনা হয়েছে সাইবার সিকিউরিটি টুলস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিতর্কিত পোস্ট, ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচার ও কদর্য ভিডিওবার্তা প্রচার করে কেউ যাতে সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে সেজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টুইটারে সরকারবিরোধী অপপ্রচার যাতে কেউ চালাতে না পারে সেদিকেও নজরদারি করা হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগসহ এ ধরনের ওয়েবসাইট যাতে কেউ কোনও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে, বিনা কারণে উসকানি দিতে না পারে, সেসব দিকেও চোখ রাখা হবে।
জানা গেছে, সরকার ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে এবং সরাসরি মনিটর করে এই মাধ্যমকে কলুষমুক্ত রাখতে উদ্যোগী সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডটের (ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম) একটা প্রকল্প আগেই ছিল, তবে সক্রিয় ছিল না। আমরা সেটাকে সক্রিয় করেছি। ভেন্ডর ফাইনালাইজ করে ওয়ার্ক অর্ডার করেছি। যন্ত্রাংশ শিপমেন্টের পর্যায়ে আছে।’ তিনি জানান, যেহেতু এটা সাইবার সিকিউরিটির বিষয়। ফলে কিছু বিষয় অ্যাড্রেস করতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভেন্ডররা (কমভ্যালি সলিউশন্স লিমিটেড) আমাদের আশ্বস্ত করেছে এই মাসের শেষ নাগাদ মনিটরিং যন্ত্রাংশ ইন্সটল হয়ে যাবে। নভেম্বরের মাঝামঝি এটা সক্রিয় হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদেরই প্রস্তাবনা ছিল— ফেসবুক মনিটরিং। আমরা চিন্তা করে দেখেছি যেহেতু এটা করছি, ফলে টেম্পোরারি বেসিসে মনিটরিং করার কোনও প্রয়োজন নেই।’
‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পের জন্য ১২১ কোটি টাকা চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। জানা গেছে, প্রকল্পটি নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চার মাস স্থায়ী হবে।
এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, ‘না, ওটা মনে হয় র্যা ব করছে। ওটার সঙ্গে আমাদের (টেলিকম বিভাগ) কোনও সম্পর্ক নেই। এত স্বল্প সময়ের জন্য কেন এত টাকা (১২১ কোটি) ব্যয়ে এটা করছে, আমি বলতে পারবো না। আমাদের টোটাল প্রজেক্টের ভ্যালু ১০০ কোটি টাকা।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা নির্বাচনের বছর। আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের সময়। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপপ্রচার যাতে ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়াতে না পারে— সেই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটি আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরা কোনও মিথ্যা তথ্য সরাতে বললে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে দেবে, অপকর্মে জড়িত আইডি ব্লক করা, আইপি চিহ্নিত করার মতো পদক্ষেপগুলো এখন তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া সম্ভব হবে।’
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা এবার অনেকেই নির্বাচনি প্রচার মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেন। অনলাইনে নিজের ও দলের ইতিবাচক প্রচারণা চালাবেন। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পারে অনিষ্টকারীরা। তারা সরকার ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বাজে পোস্ট দিতে পারে, কুৎসা রটাতে পারে। যা ভোটারদের কাছে দলের ও প্রার্থীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। সরকারের উন্নয়নের তথ্যর বদলে বিকৃত তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তিও তৈরি করার চেষ্টা করা হতে পারে। এসব বিষয় সামনে রেখে সরকার এবার সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে মনিটরিংয়ের বিষয়টি সামনে আসছে।
তথ্যপ্রযুক্তির গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী ও ফেসবুক কমিউনিটি ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপক আরিফ নিজামি বলেন, ‘মনিটরিংয়ের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যানুয়াল পদ্ধতি। যেমন ফেসবুক চেক করে দেখা। র্যা ন্ডম স্যাম্পলিং মেথডও রয়েছে। যেগুলোতে দৈবচয়নের ভিত্তিতে আইডি চেক করে দেখা হয়। এছাড়া কিছু কি-ওয়ার্ড দিয়েও সার্চ করে দেখা হতে পারে। যারা এগুলো মনিটর করবেন তারা এসব পদ্ধতি ব্যবহার করবেন নাকি ভিন্ন কোনও উপায়ে মনিটর করবেন, সেটা মনিটর শুরু হলে বোঝা যাবে।’ তবে তিনি মনিটরিং প্রক্রিয়াটিকে বেশ জটিল বলেও উল্লেখ করেন।