মঙ্গলবার , ২০ নভেম্বর ২০১৮ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নির্বাচনের কয়েকটি দিক

Paris
নভেম্বর ২০, ২০১৮ ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নির্বাচন নিয়ে কিছুদিন যাবৎ যে তর্ক-বিতর্ক, কাদা ছোড়াছুড়ি, অনিশ্চয়তা চলছিল সেটা এখন দূর হয়েছে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর। কিন্তু তা সত্ত্বেও তর্ক-বিতর্ক, কাদা ছোড়াছুড়ির অবসান হয়নি।

হওয়ার কথাও নয়। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে, তেমনি এখানকার শাসক শ্রেণীর দলগুলো কোনো না কোনো ইস্যু বের করে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে। কাজেই এখনও এই নোংরা কার্যকলাপ চলছে।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে তারা বদ্ধপরিকর এই মর্মে ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি অত সহজ নয়। আমাদের মতো দেশে নির্বাচনে কারচুপি হবে না এটা চিন্তা করাও যায় না। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কারচুপি কম-বেশি হতে পারে।

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে নিরপেক্ষতার ঘোষণা সত্ত্বেও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের নির্বাচনে যা করেছিল সেটা কারও ভোলার কথা নয়। মনে রাখা দরকার, যারা তখন সরকারি ক্ষমতায় ছিল তারা এখনও আছে। তাদের চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে এটা ভাবার কারণ নেই।

কাজেই সুযোগ মতো তারা কারচুপির চেষ্টা যে চালিয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। কাজেই নির্বাচনের বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর এবার দেখতে হবে নির্বাচন যতটা সম্ভব কারচুপিহীন হতে পারে। ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী প্রধান বলেছেন, নির্বাচনে তাদেরকে কোনো দায়িত্ব দিলে তারা সেটা পেশাগতভাবে পালন করবেন (Daily Star, 19.11.2018)। অর্থাৎ পক্ষপাতহীনভাবেই তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন।

সামরিক বাহিনীর বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থার দ্বারা এ ধরনের কথা বলার সুযোগ হয় তখনই, যখন যে বিষয়ে সতর্কতার কথা তারা বলেন তার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশে নির্বাচনে কারচুপির যে সমূহ সম্ভাবনা, এটা ২০১৪ সালের নির্বাচনেই দেখা গেছে।

আগেই বলা হয়েছে, নির্বাচনে কারচুপি হবে না এটা অবিশ্বাস্য। তাছাড়া কারচুপি যে শুধু সরকারি দলই করে থাকে এমন নয়। সুযোগ-সুবিধা মতো বিরোধী দলও কারচুপি করে। তবে নির্বাচনে কারচুপির ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকাই প্রধান। ২০১৪ সালের নির্বাচনের দিকে তাকালে বলা যায়, এ কারচুপির ভূমিকা সার্বভৌম। সেখানে প্রতিযোগিতার কোনো ব্যাপারই ছিল না।

সে সময় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের ওপর এবং সেই সঙ্গে নিজেদের পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করেই সরকারি দল নির্বাচন করেছিল এবং তাদের ভয়ে ১৫৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। সেই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং কোনো ভোট না পেয়েই জয়লাভ করায় আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট ছাড়াই সরকারি ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল।

তারপর তারা আবার বেশ নিরাপদেই পাঁচ বছর ধরে দেশ শাসন করে এসেছে। এই দ্বিতীয় পাঁচ বছরের মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে শোষণ-শাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও সমাজে নৈরাজ্য করেছে, তার তুলনা পাওয়া কঠিন।

বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতির মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটছে। সরকারের শোষণ-নির্যাতন জনগণের ব্যাপকতম অংশের মধ্যে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এসেছে, তার একটা সাংগঠনিক রূপ এখন দেখা যাচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে এটা বলা দরকার যে, ২০১৪ সালের পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকাও কম ছিল না।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলে তারা দেশে ‘জ্বালাও-পোড়াও’-এর এক অভিযান চালিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করেছিল, যার ফলে তাদের প্রতি জনগণের বিশেষ আস্থা ছিল না এবং জনগণের একটা বড় অংশ তাদের বিরোধী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সেই অবস্থার সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনের সময় সেদিক দিয়ে পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপিকে মাথা তুলতে না দেয়ার জন্য সরকার বেপরোয়াভাবে তাদের কর্মী ও নেতাদেরকে ধরপাকড়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করেছিল। এখনও পর্যন্ত নির্বাচনের মুখেও তারা এ কাজ থেকে বিরত নেই, মুখে তারা যা-ই বলুক। তা সত্ত্বেও তাদের গত দশ বছরে, বিশেষত ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ যা করেছে তাতে সমাজে নৈরাজ্য চারদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে।

একের পর এক ব্যাংক লুটপাট হয়েছে, উন্নয়নের নামে তৈরি প্রকল্পগুলোতে সাগর চুরি হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি ভয়ানকভাবে কমে গেছে। এর ফলে শাসক দলের বিরুদ্ধে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বড় আকারে পরিবর্তিত হয়েছে। ফায়দা এসেছে বিরোধীদের হাতে।

বিরোধী দলগুলো এখন তাদের হাতে শক্তি অনেকখানি পুনরুদ্ধার করেছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও তাদের সাংগঠনিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। তাদের জনসভাগুলোতে যেভাবে নানা সরকারি বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও মানুষ জড়ো হচ্ছে, তার মধ্যেই এটা দেখা যায়।

এখানে লক্ষ করার বিষয়, বিরোধী দলগুলোর এই অবস্থা দেখে নির্বাচনের মুখেও তাদেরকে সভা-সমিতি-মিছিলের অনুমতি সহজে দেয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই দেয়া হচ্ছে না।

এটা মনে করার কারণ নেই যে, এই সরকারি নীতির মধ্যে তাদের কোনো শক্তির পরিচয় আছে। আসলে এসব থেকেই বোঝা যায় সরকার এখন নির্বাচন সামনে দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের প্রতিফলনই তাদের নানা বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন কথাবার্তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

বিগত মিউনিসিপ্যাল ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সরকার নানা অভিযোগ এনে তাদেরকে দুর্বল ও শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে। অথচ তারা নিজেরা বিরোধী দলের অনেক পোলিং এজেন্টকে পর্যন্ত ভেতরে ঢুকতে দেয়নি এবং ভোটের বাক্স দখল ও ভাংচুর করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। সম্ভব হলে তারা আগামী সাধারণ নির্বাচনেও একই লাইনে কাজ করার চেষ্টা করবে।

কিন্তু এবার সেক্ষেত্রে অসুবিধা আছে। কারণ জনগণ এখন আগের থেকে অনেক সতর্ক। তাছাড়া সরকার কত পুলিশই বা একেকটি ভোট কেন্দ্রে মোতায়েন করতে পারে? পুলিশের মোট যা সংখ্যা তাতে বেশি পুলিশ মোতায়েন সম্ভব নয়। তবে তার সঙ্গে আছে আনসার বাহিনীর লোক এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পেশিশক্তি। তবে এবার বিরোধী দলগুলোর সমর্থক ছাত্র ও যুবকরাও কম নেই।

পরিস্থিতির মধ্যে একটু সুযোগ তৈরি হলেই, যা নির্বাচনের সময় তৈরি হবে, এই ছাত্র-যুবক এবং জনগণের একাংশ ভোট কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত থাকবে। তারা উপস্থিত থাকবে এটা দেখার জন্য যাতে বিরোধী দলের মনোনীত লোকজনকে, পোলিং এজেন্টদেরকে ঠিকমতো ভোট কেন্দ্রে ঢোকা এবং তাদের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা যায়।

বিরোধী দলগুলোরও এক্ষেত্রে যা করা দরকার তা হল, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ব্যাপকভাবে ছাত্র, যুবক ও সাধারণ লোককে শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত থাকতে আহ্বান জানানো। পরিস্থিতি এমন যে, তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানই কারচুপি ও জোরজুলুম বন্ধ করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, কাউকে কোনো ধরনের সহিংসতার আশ্রয় নিতে হবে না। তাছাড়া ২০১৪ সালের মতো এবার সরকারি কর্মচারীরা, নির্বাচন কমিশনের লোকরা কারচুপির পক্ষে একতরফাভাবে কাজ করবে, এটা মনে করারও কারণ নেই।

সরকারি ও বিরোধীদলীয় জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সরকারি শিবিরে আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী শিবিরে বিএনপিই মুখ্য শক্তি। তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কারও কিছু করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। আওয়ামী জোটের শরিকরা দাবি করেছিল তাদের আসন নির্ধারণ করে পরে আওয়ামী লীগের আসন বণ্টনের।

কিন্তু আওয়ামী লীগ তা থোড়াই পরোয়া করে নিজেদের দলের আসন বণ্টন কাজ প্রায় শেষ করেছে। এটা খুব পরিষ্কার যে, কোনো আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা থাকলে সে আসনে তারা শরিকদের কোনো প্রার্থী দেবে না। বিএনপির ক্ষেত্রেও এটা প্রায় একইরকম। কাজেই আসন বণ্টন নিয়ে দুই শিবিরেই কিছু টানাপোড়েন আছে। তবে এদিক দিয়ে আওয়ামী লীগের শিবিরে সংকট বেশি।

আওয়ামী লীগের মধ্যে পরাজয়ের একটা আতঙ্ক ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে এবং তার প্রতিফলন হচ্ছে তাদের নানা অবাস্তব আস্ফালনের মধ্যে। এই আতঙ্ক বেশি করে দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে, যারা গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে প্রায় খোলাখুলিভাবে বিভিন্ন নির্যাতন, গুম, মামলা, হয়রানি অতিরিক্ত করেছে শুধু বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ লোকদের বিরুদ্ধেও।

এই আতঙ্কিত লোকরা যে আওয়ামী লীগের জয় চায় এটা তো বোকার পক্ষে বোঝাও কঠিন নয়। এই সঙ্গে আছে অন্যরা, যারা আওয়ামী লীগ থেকে নানারকম বেআইনি সুবিধা লাভ করেছে, অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। সাধারণভাবে তাদেরও আওয়ামী লীগের জয়ই কামনা করা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানেও ব্যাপার আছে। যারা যা পাওয়ার ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে।

তাদের একটা অংশ এজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। কিন্তু অন্য একটা অংশ চিন্তা করবে, যা পাওয়ার এটা তো তারা পেয়েই গেছে, কাজেই আওয়ামী লীগকে সমর্থনের প্রয়োজন তাদের নেই।

উপরন্তু খোলাখুলি আওয়ামী লীগ সমর্থন তাদের জন্য ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনতে পারে- এই চিন্তা থেকে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন থেকে বিরত থাকতে পারে। নির্বাচনের সময় এসব বিষয়ই হিসেবের মধ্যে থাকা দরকার, কারণ এগুলো ভোটাভুটির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্ধারক ব্যাপার না হলেও গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির মনোনয়নের ব্যাপারে তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্স করে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। এটা আইনি কি বেআইনি তা এখন অবান্তর। কারণ এ কাজ বেআইনি যদি হয় তাহলেও সরকারের পক্ষে বা তাদের হুকুমমতো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার উপায় নেই।

সেটা হলে দেশে যে পরিস্থিতি হবে, আন্তর্জাতিক মহলে এর যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের ক্ষমতার বাইরে। এর ফলে তাদেরকে এমন বিপদে পড়তে হবে, যা মনে হয় তারা কল্পনাও করতে পারে না। বাংলাদেশে যে আইনের শাসন কোনো হিসাবযোগ্য ব্যাপার নয় এবং অদ্ভুত সব অপব্যাখ্যার দ্বারা সংবিধান পদদলিত করে যে শাসনক্ষমতায় থাকা যায় এবং নিরাপদে শাসনকাজ পরিচালনা করা যায়, এটা আওয়ামী লীগ নিজেই প্রমাণ করেছে।

সর্বশেষ - জাতীয়