নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আগে শুধু বয়স্কদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকলেও এখন আক্রান্ত হচ্ছে তরুণরা। উচ্চ রক্তচাপ ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনিরোগ, পক্ষাঘাত, অন্ধত্বসহ নানাবিধ জটিল অসুখের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।

বিশেষজ্ঞরা জানান, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্য সব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অকাল মৃত্যু দ্রুত কমানো সম্ভব। অথচ অর্ধেক মানুষ এ সম্পর্কে জানেই না। অসচেতনতার কারণেই উচ্চ রক্তচাপে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আর নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি।

চিকিৎসকদের মতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো কৌশল হচ্ছে জীবনাচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে ও নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সবার উচিৎ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা মেনে চলা। এ কারণে, রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হলো হৃদরোগ, ক্যানসার, কিডনিরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এনসিডি কান্ট্রি প্রোফাইল ২০১৮ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের পেছনে দায়ী নানা অসংক্রামক রোগ। দিন দিন এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ২০১০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ ৩৩ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ। ডব্লিউএইচওর ২০১৮ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ। অন্যান্য অসংক্রামকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে অকাল মৃত্যু হয়েছে ২২ শতাংশ মানুষের।

বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে-২০১৮ অনুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২১ শতাংশ (নারী ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, পুরুষ ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তার মধ্যে শহরের ২৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। গ্রামের ৫৪ শতাংশ ও শহরের ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অসচেতন। এছাড়া রক্তচাপ সম্পর্কে জানলেও গ্রামের ৩২ দশমিক ৪ ও শহরের ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ অসচেতনভাবেই চলেন। আর নিয়ন্ত্রণ করে চলেন গ্রামের ১৩ দশমিক ৬ ও ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ। এছাড়া দেশের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ ও ১১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী কখনোই উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপ করেন নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান জানান, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা সবচেয়ে বেশি। ডব্লিউএইচও এর মতে আফ্রিকা অঞ্চলগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ২৭ শতাংশ। যেখানে আমেরিকায় সবচেয়ে কম ১৮ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মঙ্গে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত সংখ্যা ১৯৭৫ সালে ৫৯৪ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৩ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ডা. মোস্তফা জামান বলেন, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্বাস্থ্যকর খাবার (অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার, ফল ও সবজি কম খাওয়া), শারীরিক অক্ষমতা, তামাক এবং অ্যালকোহল সেবন, এবং অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া। এছাড়া অ-পরিবর্তনযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং সহ-বিদ্যমান রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগ।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক বলেন, সরকার জানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। শুধু বড় বড় হাসপাতাল করলে হবে না। জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে এসব নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কমানো যায় এটা দেখতে হবে। শুধু চিকিৎসক, নার্স দিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ হবে না।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ