নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?

প্রেয়সীকে তুষ্ট করতে কত কিছুই না করে প্রেমিক। এসব নিয়ে সত্যি ঘটনা আর মিথের ছড়াছড়ি চারদিকে। ফলে এসব নিয়ে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই, কিন্তু তাই বলে নিজের সব দাঁত তুলে ফেলে প্রেমিকার জন্য গলার মালা গড়িয়ে দেয়ার খবরে হোঁচট কিন্তু খেতেই হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, মিসরের এক যুবক নিজের সব দাঁত তুলে ধাতব সুতায় মালা গেঁথেছেন প্রেয়সীর জন্য। ওই যুবকের ছবিসহ দন্তমাল্যের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে বাংলাদেশের অনেকেই গেয়েছেন ‘প্রেমের জয়গান’।

তবে ফেসবুকে গুজবের ছড়াছড়ি থাকায় নিউজবাংলা খুঁজে দেখেছে প্রেমের জন্য এমন নিবেদনের পেছনের খবর। আর তাতে বেরিয়ে এসেছে একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট কী করে আরব অঞ্চলে ভাইরাল হওয়ার পর বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বাংলাদেশের ফেসবুকারদের মাঝেও।

গুগল লেন্সসহ আরও কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে নিউজবাংলা দেখেছে, দন্তমাল্যের সঙ্গে ফোকলা দাঁতের যুবকের ছবিটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে প্রথম পোস্ট করেন মিসরের তরুণ অভিনেতা মোস্তফা সলিমান এল সায়েদ।

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?
মিসরের তরুণ অভিনেতা মোস্তফা সলিমান এল সায়েদ টুইটার ও ফেসবুকে এই পোস্টটি করেন ৩১ অক্টোবর

 

৩১ অক্টোবর রাত ১১টা ২০ মিনিটে ওই পোস্টে ছিল পাশাপাশি দুটি ছবি। একটিতে দাঁতের তৈরি মালা, অন্যটিতে হাসিমুখে দন্তহীন এক তরুণ।

মোস্তফা সলিমান পোস্টে আরবি ভাষায় একটি বার্তাও দেন। যার বাংলা অর্থ, ‘সিরিয়াসলি, ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর অর্থ যা আমি আমার জীবনে দেখেছি, তা হলো আপনি আপনার সমস্ত দাঁত বের করে আপনার ভালোবাসার মানুষকে দিয়ে দিন। ❤❤❤’

নিজের টুইটার ও ইনস্টাগ্রামেও পোস্টটি করেন মোস্তফা সলিমান এল সায়েদ। ব্যস, সেখান থেকেই শুরু। নেটিজেনরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন তার পোস্টে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ ফেসবুক ইউজার তার পোস্টে রিঅ্যাক্ট করেছেন। যার মধ্যে ২ হাজার ২০০ ব্যবহারকারী ‘হাহা’ রিঅ্যাক্ট দেন, আর কমেন্ট পড়েছে ৭২৮টি। পোস্ট শেয়ার হয়েছে ৫৪৪ বার।

ভালোবাসার এমন ‘নিদারুণ নিদর্শনের’ মতো সিরিয়াস পোস্টে হাসির রিঅ্যাক্ট সন্দেহ জাগায়। তবে আরবি ভাষার কমেন্টগুলো অনুবাদ করে বোঝা যায়, সেটি ছিল মোস্তফা সলিমানের একটি ‘ফান পোস্ট’।

সেখানে মজা করে ইব্রাহিম মাগদি নামের একজন লিখেছেন, ‘এত প্রেম কই থাকে?’ উত্তরে মোস্তফা সলিমান বলেন, ‘তার ঘাড়ে।’ পরে আবার লিখেছেন, ‘ঈশ্বর, আমায় তুমি বিশ্বাস করো না।’

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?

 

পোস্টটির কমেন্ট অংশে মোস্তফা সলিমানের বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনেরা নানান হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করেছেন। এসব মন্তব্য এবং মোস্তফা সলিমান এল সায়েদের বিভিন্ন সময়ের ছবি মনোযোগ দিয়ে দেখা যায়, দন্তহীন ছবিটিও তার। মোস্তফা সলিমান ছবি সম্পাদনার অ্যাপ দিয়ে দাঁত সরিয়ে নিজের ছবিই বসিয়ে দিয়েছেন ওখানে।

আর দন্তমাল্যের কথা ভাবছেন তো? সেটি আসলে পিনটারেস্টে এক একটি জুয়েলারি শিল্পীর পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে নেয়া।

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?

 

পিনটারেস্ট হলো ছবি শেয়ারিং এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মতো একটি সেবা। মানুষের দাঁতের তৈরি মালাটির ছবি পিনটারেস্টে শেয়ার করা হয়েছিল radar@radarjamesmars প্রোফাইল থেকে। আলোচিত মালাটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু দন্তমাল্যের ছবি রয়েছে ওই প্রোফাইল অ্যাকাউন্টে।

 

মোস্তফা সলিমানের ফান পোস্ট যেভাবে সত্যি হয়ে গেল

 

মিসরের আলেক্সান্দ্রিয়ার মোস্তফা সলিমান এল সায়েদ এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ফান পোস্ট ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ভঙ্গিতে উপস্থাপনের কারণে আলোচিত হয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

বেশি কিছু ভাবতে অনভ্যস্ত অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী মোস্তফা সলিমানের পোস্টটি লুফে নিয়ে ছড়াতে শুরু করেন। এই পালে আরও হাওয়া লাগে গত ২ নভেম্বর। সেদিন আলজেরিয়ার শিল্প ও বিনোদনকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম ‘ইটি’ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মোস্তফা সলিমানের পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে।

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?

 

ইটি তাদের ক্যাপশন লিখেছে, ‘অদ্ভুত এক ঘটনায়…. মিসরের এক যুবক তার নিজের সব দাঁত খুলে, তার বান্ধবীকে দিলেন… 😮😬🙄।’

ইটির পোস্টটি আবার নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন মোস্তফা সলিমান। শিরোনামে লেখেন, ‘ধারাবাহিকতা ধারাবাহিকতা। ওই পোস্টে রিঅ্যাক্ট করা ৫৯৪ জনের সবাই একযোগে ‘হাহা’ দিয়েছেন। মোট ১১০টি কমেন্টে সবাই হাসিঠাট্টা করেছেন।

এখানেই বিষয়টি থেমে যায়নি। ইরাকের কুর্দিস্তানের ‘কুর্দিস্তান২৪’ নামের একটি স্বল্প পরিচিত সংবাদমাধ্যম ৩ নভেম্বর তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করে।

দন্তহীন তরুণ আর দাঁতের মালার ছবি দিয়ে কুর্দিস্তান২৪ লিখেছে, ‘এভাবেই এক তরুণ প্রেমিকার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, আপনি কী ভাবছেন?’

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?

 

এবার অবশ্য বেশির ভাগ মানুষ বোকা বনেননি। অনেকেই বুঝতে পেরেছেন, এটি নিছক মজার পোস্ট ছিল, যার কোনো সত্যতা নেই। কুর্দিস্তান২৪ এর ওই পোস্টে ১৭ হাজার মানুষ রিঅ্যাক্ট করেন।

কেউ কেউ মজার ছলে মোস্তফাকে আক্রমণ করেও কমেন্ট করেছেন। হালো মোহাম্মেদ ইব্রাহিম নামের একজন লিখেছেন, ‘এক মাস পর গার্লফ্রেন্ড ব্রেকআপ চাইবে, কারণ তার মুখের গন্ধ বাজে আর চুমুর সময় অদ্ভুত শব্দ করেন।’

কুর্দিস্তান২৪ এর পোস্ট শেয়ার না দিয়ে এর স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়েছেন কৌশলী মোস্তফা। অবশ্য সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘অবশেষে মানুষ বুঝতে পেরেছে।’

আরব অঞ্চলে দন্তমাল্য নিয়ে বিভ্রান্ত যখন শেষের দিকে, বাংলাদেশে তখন এটি অনেকেই শেয়ার দিচ্ছেন।

 

নিজের সব দাঁত তুলে মালা বানিয়ে প্রেয়সীকে উপহার?
বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীও পোস্টটি শেয়ার দিচ্ছেন

 

মোস্তফা সলিমানের পোস্ট করা ছবিটি দিয়ে আহমেদ রিয়াদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই লোক নিজের সব দাঁত তুলে ফেলে, সেই দাঁত দিয়ে নিজের গার্লফ্রেন্ডের জন্য নেকলেস বানিয়ে দিয়েছেন। ভালোবাসা মানুষকে শুধু অন্ধই করে না, মাঝে মাঝে ফোকলাও বানিয়ে দেয়!’

মোস্তফা সলিমানের কাণ্ডকীর্তি বিশ্লেষণ করে ‘একজন যুবক তার দাঁত বের করে তার বাগদত্তাকে দিয়েছে.. সত্যি কী?’- এমন শিরোনামে ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন আহমাদ আল খালিদি আহমাদ।

সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, জনপ্রিয়তা আর আলোচনায় থাকতেই এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন মোস্তফা সলিমান। অভিনেতা হিসেবে তিনি খুব একটা সফল হতে না পারলেও এ ধরনের ফান পোস্ট তার পরিচিতি বাড়াতে বেশ সাহায্য করছে।