নিজের আশা পূরণ না হওয়ায় মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন তার

চাবিওয়ালা লাট্টু

জেসমিন আরা ফেরদৌস:

নিজের স্বপ্ন ছিল সরকারি বড় অফিসার হওয়ার। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। এবার নিজের মানসপটে নতুন স্বপ্ন বুননের আশা। সেই স্বপ্ন হলো- মেয়েকে দিয়ে মানবসেবার স্বপ্ন। মেয়েকে বড় ডাক্তার বানিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করা তার দীর্ঘদিনের বাসনা।

পাঠক হয়তো ভাবছেন- স্বপ্নটি কি প্রতিবেদকের? না- মোটেও না। এমন স্বপ্ন লাট্টু চাবিওয়ালার।  যিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে চাবি বানানোর কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন। জনগণের ঘরের দরজা কিংবা অন্য কোথাও লাগানো তালার করছেন সমাধান।

সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে লাট্টু চাবিওয়ালার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। বলেন- নিজের  পেছনে ফেলে আসা দুঃস্বপ্নের কথা। জানান- মনের গহীনকোণে লুকানো নিজের মেয়েকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুননের কথা।

লাট্টু জানান, বাবার দেওয়া নাম তার শের শাহ। কিন্তু লোকে ডাকে লাট্টু চাবিওয়ালা। এই নামেই তিনি পরিচিত। চাবি বানিয়ে মানুষের কষ্টকর কাজের সমাধান তিনি অনায়াসেই করেন। কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে তার যে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই চাবি বানানোর আয়-রোজগার দিয়ে মেয়েকে বড় ডাক্তার বানানোই তার এখন একমাত্র ব্রত। মেয়েকে বড় ডাক্তার বানিয়ে হতে চান একজন আদর্শ পিতা। মেয়েকে দিয়ে করাতে চান মানবসেবা।

তিনি সিল্কসিটি নিউজের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিলো নিজে একদিন বড় অফিসার হবো। কিন্তু পরিবারের দ্বায়িত্ব কাঁধে আসায় আমার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। তাই আমি আমার মেয়েকে ডাক্তারিতে ভর্তি করেছি যেন সে একদিন বড় ডাক্তার হতে পারে আর আমার স্বপ্ন পূরণ করে।’

এক প্রশ্নের জবাবে চাবির এই কারিগর বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ টি চাবি বানাই। তবে ভাগ্য প্রসন্ন হলে কোন কোন দিন এর পরিমাণ ১০০ তে পৌঁছায়। চাবির প্রকারভেদে পারিশ্রমিক নিই। কোন চাবির মূল্য ১৫ টাকা আবার কোনোটির ৪০ টাকা।’

লাট্টু বলেন, ‘কখনো কখনো মানুষের বাড়িতে গিয়েও চাবি বানিয়ে দিয়ে আসি। চাবির ব্যবসাতে সৎ-অসতের মারপ্যাচ আছে। তাই চাবির কারিগর হওয়াটা অনেক দায়বদ্ধ একটি পেশা। কেননা- অনেকেই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চাবি বানাতে আসে। খারাপ কাজের উদ্দেশ্যে কেউ চাবি বানাতে আসলে তার কথাতেই আমি বুঝতে পারি। এজন্য কেউ চাবি বানাতে আসলে তাকে তার কথাবার্তা ও তাকে গভীরভাবে অবজার্ভ করি। সন্দেহ হলে তাকে আমি আর চাবি বানিয়ে দিই না। কৌশলে তাকে ফিরিয়ে দিই। তাই চাবি বানানোর ক্ষেত্রে আমি ব্যাপকভাবে সততার বিষয়টি খেয়াল করি।

বাপ-দাদার বংশ পরম্পরায় তার এই চাবি বানানোর ব্যবসার কথা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘চাবি বানানো পেশাটি আমার বংশগত পেশা। বংশ পরম্পরায় এই পেশা চলে আসছে। আগে আমার বাবা-দাদা এই চাবি বানানো পেশার সাথেই জড়িত ছিলেন। পরিবারের হাল ধরতে এবং বংশপরম্পরা টিকিয়ে রাখতে আমার এই চাবি বানানো।’

রাজশাহীর বায়া এলাকার বাসিন্দা চাবির এই কারিগর বলেন, ‘সংসারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখা খুব বেশি করতে পারিনি।  অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। তাই দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষের মত মানুষ বানিয়ে দেশ ও দেশের জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করাতে চাই। সেই বাসনা থেকেই বড় মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চাই। আর ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার।’

এএইচ/এস