না পালিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলুন: ট্রাম্পকে চীনের খোঁচা

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গোটা আমেরিকা। সুযোগ বুঝে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খোঁচা দিতে ভুল করেনি চীন।

চীন বলছে, মার্কিন সমাজে বর্ণবৈষম্য ও পুলিশি নৃশংসতা জাঁকিয়ে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচাতে বাঙ্কারে না পালিয়ে ট্রাম্পের উচিত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা।

অন্য দেশগুলোতে ঝামেলা না পাকিয়ে নিজেদের সমস্যাগুলো কীভাবে মেটানো যায়, সেদিকে মন দেয়া উচিত মার্কিন রাজনীতিকদের।

চেক জালিয়াতির অভিযোগে গত সপ্তাহে মিনেসোটা রাজ্যের মিনোপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে নৃশংসভাবে খুন করে সেখানকার পুলিশ।

শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে বারবার আর্জি জানাতে থাকলেও হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে বসে থাকেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও সামনে আসতেই বিক্ষোভ শুরু হয় দেশজুড়ে। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তা হিংসাত্মক আকারও ধারণ করেছে।

শুক্রবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালীন নিরাপত্তার খাতিরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেই খবর সামনে আসতেই সুযোগ বুঝে ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলতে নেমে পড়ে চীন। হংকংয়ের ওপর চীনা নিয়ন্ত্রণ কায়েম হওয়ার পথে বরাবর বাধা দিয়েছে আমেরিকা।

সম্প্রতি চীনা পার্লামেন্ট হংকংকে নিরাপত্তা বিলের আওতায় আনার প্রস্তাবে সমর্থন জানালে, তার বিরুদ্ধেও সরব হয় ওয়াশিংটন। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তীব্র কটাক্ষ করেছে চীন।

সোমবার বেইজিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিজিয়ান ঝাও বলেন, মার্কিন সমাজে বর্ণবৈষম্য এবং পুলিশি নৃশংসতা কতটা গভীরভাবে জাঁকিয়ে বসেছে, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুই তা দেখিয়ে দিল। বর্ণবৈষম্য দূর করে কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে মার্কিন সরকারকে চিন্তা করতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

শুধু তাই নয়, জাতিসংঘে রাশিয়ার উপপ্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কির একটি মন্তব্যও রিটুইট করেন ঝাও। যাতে বলা হয়– হংকংয়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাইছে চীন। কিন্তু তাতে বাধা দিচ্ছে আমেরিকা। অথচ নিজেদের দেশে গায়ের জোরে বিক্ষোভ দমন করছেন তারা।

শুধু লিজিয়ান ঝাওই নন, জর্জ ফ্লয়েডের শেষ বাক্য উদ্ধৃত করে সোমবার টুইটারে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ লিখে পোস্ট দেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক মুখপাত্র হুয়া চুনিংও।

সেই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগ্যান ওর্টাগাসের হংকং নিয়ে লেখা একটি টুইটও তুলে ধরেন তিনি, যেখানে চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন মরগ্যান।

এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস এবং এটির সম্পাদক হু শিজিনও। মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি একসময় হংকংয়ের বিক্ষোভের প্রশংসা করেছিলেন।

সে কথা উল্লেখ করে হু শিজিন লেখেন, মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হংকংয়ের হিংসাত্মক বিক্ষোভ দেখে বলেছিলেন– অসাধারণ দৃশ্য। আশা করি এবার বাড়ির জানালা থেকে একই ধরনের দৃশ্য উপভোগ করছেন মার্কিন রাজনীতিকরা।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখ লুকানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন হু শিজিন। তিনি বলেন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, সিক্রেট সার্ভিসের পেছনে লুকাবেন না। তার চেয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলুন।

সমঝোতায় আসার চেষ্টা করুন। ঠিক যেমনভাবে হংকংয়ের দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে চীনকে আলোচনায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন আপনি। তবে ট্রাম্পকে কটাক্ষ করলেও জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে যারা হিংসাত্মক বিক্ষোভের পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের চীন সরকার একেবারেই সমর্থন করে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

তবে শুধু চীন বা রাশিয়াই নয়, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মার্কিন সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে ইরানও।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মো. জাভেদ জারিফ বলেন, কেউ কেউ ভাবেন কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের একজোট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

সুত্রঃ যুগান্তর