নারীরা কাজী হতে পারবেন না: হাইকোর্ট

‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় বাংলাদেশে কোনো মুসলিম নারী নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থা এবং ধর্মীয় কারণেই একজন নারীর পক্ষে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ প্রত্যাশী আয়েশা সিদ্দিকার করা এক রিট আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে সাইফুজ্জামান।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন হাইকোর্ট। তবে সম্প্রতি এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে আয়েশা সিদ্দিকাসহ তিনজন মহিলার নামের একটি তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন তালিকার এক নম্বরে তাকা আয়েশা সিদ্দিকা। হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। এ অবস্থায় ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগের দেওয়া স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করেছেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, একজন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হতে হলে কিছু কিছু কার্যক্রম করতে হয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাতে বা বৃষ্টির মধ্যেই একজন নিকাহ রেজিস্টারকে বিয়ের অনুষ্ঠানে ছুটতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নদী পার হতে হয়, কোথাও নৌকায় করে পার হতে হয়। এই বাস্তবতায় একজন নারীর পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব নয়।

রায়ে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কা একজন নারীর জীবনে প্রত্যেক মাসে একটি বিশেষ সময় আসে যে সময়টাতে ধর্মীয় কারণেই ওই নারী মসজিদে যেতে পারেন না। আবার নামাযও পড়তে পারেন না। ঠিক ওই রকম পরিস্থিতিতে যদি কারো বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, তখন ওই নারী সে অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না। মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রারদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। সেসব নিয়মও একজন নারীর পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়।

রায়ে বলা হয়, আমাদের সংবিধান নারী ও পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। আমরা তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অন্যান্য পাবলিক অফিসে নারীরা যে ধরনের কাজ করেন, ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হিসেবে কার্যক্রমটা সম্পূর্ণ আলাদা। বিয়ে শুধুই সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, এটা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানও। একারণেই একজন নারীর পক্ষে নিকাহ রেজিস্টার হওয়া সম্ভব না।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ