বৃহস্পতিবার , ১৩ অক্টোবর ২০১৬ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নাটোরে ৩৩দিন অবরুদ্ধ ১২৫টি পরিবার, অভিযোগের তীর যুবলীগ নেতার দিকে

Paris
অক্টোবর ১৩, ২০১৬ ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

নাটোর প্রতিনিধি:

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জের ধরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা পূর্বপাড়ার ১২৫টি পরিবার ৩৩দিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। এছাড়া চাকুরি ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা কাজে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না তারা। এমনকি সামনে পরীক্ষা থাকলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যেতে পারছে না। রাস্তায় বাধাগ্রস্থ কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থী বিকল্প এলাকায় মেসে থেকে পড়াশোনা করছে।

এদিকে, পুরো গ্রামটিকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। যার কারণে পুলিশও তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ অবরুদ্ধ  গ্রামবাসীর।

 

বুধবার দুপুরে নলডাঙ্গার বাঁশিলা পূর্বপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের প্রবেশ মুখে কিছু উঠতি বয়সের যুবকরা চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। পরে গ্রামে গিয়ে জানা যায় বিলজোয়ানী গ্রামের ওই যুবকরাই বাঁশিলা গ্রামের লোকজন, কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে তাদের দ্বারাই বাধা প্রাপ্ত হয়। স্কুল শিক্ষার্থী, কর্মজীবি নারী পুরুষ, ব্যবসায়ীসহ কেউই গ্রামের বাহিরে যেতে পারে না তাদের বাধার কারণে।

 
জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাধনগরের ইউনিয়নের বাঁশিলা গ্রামের সাথে সংঘর্ষ হয় পিপরুল ইউনিয়নের বিলজোয়ানী গ্রামের লোকজনের। বাঁশিলা গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, তাদের গ্রামের পাশে অনাবাদি জমিতে ফুটবল খেলাধুলা করে গ্রামের শিশু কিশোররা। কিন্তু সেখানে বিলজোয়ানী গ্রামের উঠতি বয়সের কিছু যুবক সেখানে এসে বাঁধার সৃষ্টি করে।

 

এনিয়ে কয়েক বার বিলজোয়ানী গ্রামের মাতব্বরদের বিচার দিয়েও কোন সমাধান হয়নি। এর জেরে গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকালে ফুটবল খেলার সময় বিলজোয়ানীর লোকজন জোরপূর্বক খেলতে আসলে তাদের নিষেধ করলে বাক বিতন্ডার সূত্রপাত হয়। পরে বিলজোয়ানী গ্রামের লোকজন পিপরুল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শাহ জালাল দেওয়ানের নেতৃত্বে বাঁশিলা গ্রামে হামলা করে। এ সময় তারা গ্রামের নারী পুরুষদের মারপিটসহ ঘরবাড়িতে ভাংচুর চালায়।

unnamed-0125
এ ঘটনার পর থেকেই বাঁশিলা গ্রামের ১২৫টি পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে যুবলীগ নেতা শাহ জালালের সমর্থকরা। ফলে কোমল স্কুল শিক্ষার্থী, প্রাণ কোম্পানীর কর্মজীবি নারী, এলাকার দরিদ্র মৌসুমি মৎস্যজীবি, ভ্যানচালকসহ কর্মজীবি পুরুষ ব্যবসায়ীরা কাজে যেতে পারছেন।

 
গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথেই এলাকার ক্লিক মোড় হিসাবে পরিচিত মোড় থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। ফলে এক মাস থেকে অবরুদ্ধ রয়েছে গ্রামের লোকজন। শাহজালালের ভাতিজা সজিবের নেতৃত্বে সানাউল্লাহ, আসাদুল, তকবিল, নিজাম, কামাল ও রবিনসহ ১০/১২জন যুবক সব সময়ই ওই মোড়ে বসে থাকে।

 

কেউ যেতে থাকলেই তাদের বাধা দেয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনার জেরে বাঁশিলা গ্রামের শরিফ সরকারের ছেলে মনির সরকারকে মারপিট করে মোবাইলসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে মামলা করেও কোন প্রতিকার পায়নি মনিরের পরিবার।

 

প্রাণ কোম্পানীতে কর্মরত বাঁশিলা গ্রামের জাহানারা, রাবেয়া, বেহুলা ও হরুনা বেগম জানান, তারা কাজে যাওয়ার জন্য বের হলেই ক্লিক মোড় তাদের ফেরত পাঠানো হয়। ফলে সামান্য আয়ের পথটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা।

 

বর্ষার সময় অন্য কাজ না থাকায় হালতি বিলের মাছ ধরে তা বিক্রি করে চলে যে দরিদ্র কৃষকদের তাদের মাছ বিক্রি করতে বাজারে যেতে পারছেন না। এমনটাই জানা গেলো হাফিজুল, আমান কালু ও শাহজালালের সাথে কথা বলে। এমন আরো অন্তত ২০/২৫ জন মাছ ব্যবসায়ী রয়েছে ওই গ্রামে।

 

স্কুল যেতে না পারা কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও জানালো স্কুল যেতে তাদের বাধা দেয়ার কথা। সামনে তাদের পরীক্ষা কিন্তু স্কুলে না যেতে পারায় চিন্তিত ওই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এলাকায় বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের পিপ্রাইমারী স্কুলে বেতন দিয়ে ভালো পড়াশোনার জন্য বাচ্চাদের ভর্তি করা হলেও সেখানকার শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে যাওয়া বন্ধ।

 

সামনে এস এসসি পরীক্ষা কিন্তু স্কুলে যেতে বাঁধা তাই মেসে রেখে সন্তানদের পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছেন কেউ কেউ। গ্রামের আকাশ, সোহেল, সজিব, শম্পা ও জাহানারাসহ কয়েকজনকে মেস বা স্বজনদের বাড়িতে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য মালেক বেপারীর ছেলে সজিব।

 

মালেক বেপারী জানান, শাহজালাল তার দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে এলাকার লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রকাশ্যে তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বাশিলা গ্রামের লোকজনদের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।

 

বাঁশিলা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ফেয়ার প্রাইজের চাউলের ডিলার ওসমান ব্যাপারী জানান, বিল জোয়ানীর লোকজন তার বাড়িতে ভাংচুর হামলা করেছে। এছাড়া তারা তার দোকান পর্যন্ত খুলতে দিচ্ছে না ফলে গ্রাহকদের তিনি চাউল দিতে পারছেন না। যার দরুন গরীব মানুষগুলো চাউল নিতে পারছেন না সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ এ সব সন্ত্রাসীদের কারনে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শংকিত তিনি। এছাড়াও পাটুল বাজারে দোকান থাকলেও তা খুলতে পারছে না শাহজালাল, সাহাবুদ্দিন ও মেহেদীসহ কয়েকজন।

 

গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক রফিকুল, নূর ইসলাম, কামাল ও হাসান জানান, ভ্যান চালাতে না পেরে তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। তারা ভ্যান নিয়ে বের হলেই শাহজালালের লোকজন তাদের পথ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এমন আরো অন্তত ১৫জন ভ্যান চালক রয়েছে ওই গ্রামে।

 

এ সব ঘটনার জেরে বাঁশিলা গ্রামের লোকজন মামলা করলেও অজ্ঞাত কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। বিষয়টি স্থানীয় এমপি জানার পর দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দায়িদ্ব দিলেও মাধনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন দেওয়ানের রহস্যজন ভূমিকার কারনে বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।

 

বিষয়টি সংবাদকর্মিদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন অবগত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সমস্যার দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।

 

এ ব্যাপারে ইউএনও শারমিন আকতার জাহান বলেন, বিষয়টি শুনে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।

 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার উভয় গ্রামের লোকজনদের মধ্য থেকে ১০ জন করে ডাকা নলডাঙ্গা থানায় ডাকা হয়। এতে বাঁশিলা গ্রামের লোকজন হাজির হলেও বিলজোয়ানীর কেউ হাজির হয়নি। তবে চেয়ারম্যানদের ওপর সুরাহার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

unnamed0-12
এদিকে অবরুদ্ধসহ হামলার নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল বলেন, আমার একটা হুকুমে পুরো গ্রাম তছনছ হয়ে যেতো। কিন্তু আমরা ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়েছি। আমরা হামলা করিনি তারা আমার ভাতিজাকে খুটির সাথে বেধে মারপিট করছিল। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে তাকে শুধু ছাড়িয়ে এনেছি। বাশিলার লেকজন নিজেরাই বাড়িতে ভাংচুর করে তার দায় আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

 

তিনি আরো বলেন, ওই গ্রামের কাউকে অবরুদ্ধ করা রাখা হয়নি। তিনি নিজের উদ্যোগে ওই গ্রামের অনেককে ডেকে দোকান চালু করেছেন বলে দাবী করেন। শাহজালাল আরো বলেন, তিনি মিমাংসার জন্য আগ্রহী দুই চেয়ারম্যান বা প্রশাসন যে সমাধান করবেন তা তিনি মেনে নেবেন। দ্রুত এর সমাধান তিনিও চান।

 

এদিকে ঘটনার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে একটি সভা চলা অবস্থায় সেখানে থাকা দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে তাৎক্ষনিক বসেন।

 

এ সময় পিপরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কলিমুদ্দিন ও মাধনগর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ আলী দেওয়ান বলেন, তারা উভয় গ্রামের প্রধানদের সাথে রাতেই কথা বলে একটা তারিখ নির্ধারন করে শালিশী বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করবেন। এছাড়া ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থা নেই জানিয়ে তারা বলেন, দুই গ্রামবাসীকে সহাবস্থান বজায় রেখে চলাচল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আতিয়ুর রহমান বলেন, গ্রামে যেন কোন বিশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে দুই চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।

স/আ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর