নাটোরে দুটি চিনিকলে ১৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি অবিক্রিত

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি
নাটোরে আখের বকেয়া মূল্য পরিশোধের দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে আখচাষীরা। জেলার দুটি সুগারমিলে আখ বিক্রির দীর্ঘ দিনেও পাওনা টাকা না পেয়ে বকেয়া আদায়ে কৃষকরা রোববার বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে এবং বিক্ষুব্ধ আখচাষীরা বাগাতিপাড়াসহ সুগার মিলের আটটি সাবজোন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

এর আগে ২৭ আগষ্ট একই দাবিতে আখচাষীরা স্মারক লিপি প্রদান করেন। এদিকে নাটোর সুগার মিল এবং নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দুটি চিনিকলে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি অবিক্রিত রয়েছে। চিনি বিক্রি করতে না পেরে এবং সরকারী ট্রেড গ্যাপ অর্থ না পাওয়ায় সময়মতো আখ বিক্রির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।

বিক্ষোভকারী আখ চাষি নেতা আশরাফুল আলম খাঁন ডাবলু জানান, গত ২০১৯-২০২০ আখ মাড়াই মৌসুমে ২১ মার্চ পর্যন্ত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আখ চিনিকলের কাছে বিক্রি করেছেন। মিলের বিভিন্ন সাবজোনের অধীনের আখ ক্রয় কেন্দ্রে তারা এ সব আখ সরবরাহ করেন। কিন্তু আখ মাড়াই মৌসুমের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও বিক্রিত আখের মূল্য তারা পাননি। ইতোপূর্বে চিনিকলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিশেহারা আখ চাষিরা ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার বাগাতিপাড়া উপজেলার নওশেরা সাবজোন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, একই দিনে বাগাতিপাড়া সাবজোন’সহ নাটোর চিনিকলের অধীনে নলডাঙ্গা, বাসুদেবপুর, নাটোর, দত্তপাড়া, আহম্মেদপুরসহ আটটি সাবজোন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আখচাষীরা। আগামী তিন দিনের মধ্যে বকেয়ার সমুদয় টাকা পরিশোধ করা না হলে মহাব্যবস্থাপকের অফিস কক্ষসহ সুগারমিলেও তালা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আখ চাষি নেতারা।


বিষয়টি সম্পর্কে বাগাতিপাড়া সাবজোন অফিসের প্রধান গোলাম মোস্তফা তালা ঝুলানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কৃষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আখ চাষি নেতাদের যুক্তি অনুযায়ী বকেয়া টাকা না পেলে তারা আগামী মৌসুমে আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাছাড়া আখ চাষ করলেও উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ না করে নগদ টাকা পেতে গুড় তৈরির ক্রাশার মালিকদের কাছে বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে সার্বিকভাবে চিনি শিল্পে প্রভাব পড়বে। ফলে অনতিবিলম্বে সমস্ত বকেয়া অর্থ পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

মিল কর্তৃপক্ষ ও আখচাষী নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার দুটি সুগার মিলে আখচাষীদের পাওনা প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে নাটোর সুগার মিলে কৃষকদের পাওনা রয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা এবং নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে কৃষকদের পাওনা সাড়ে ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও এ দুটি চিনিকলে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি অবিক্রিত রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৯৬ কোটি টাকা।

এবিষয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবীর জানান, করোনা পরিস্থিতিতে চিনি বেশি বিক্রি করা যায়নি। এছাড়া সরকার এখনও ট্রেড গ্যাপ অর্থ পাঠায়নি। মিলে এখনও প্রায় ৫০ কোটি টাকার ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে।

অপরদিকে কৃষকদের পাওনা রয়েছে সাড়ে ১০ কোটি টাকা। তবে প্রতি সপ্তাহে চিনি বিক্রি করে কিছু কিছু করে বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি টাকা পাওয়া গেলে কৃষকদের সমস্ত পাওনা পরিশোধ করা যাবে।

অন্যদিকে নাটোর সুগারমিলের জিএম রফিকুল ইসলাম জানান, মিলে এখনও প্রায় ৪৬ কোটি টাকা মূল্যের ৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে।

অপরদিকে তাঁর চিনিকলের অধীনে আখচাষীদের পাওনা প্রায় ৯ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি বাজারে বেসরকারি চিনি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মান ভাল হওয়ায় তাদের সরকারি চিনির দর কেজি প্রতি ৬০ টাকা৷ এ কারণেও অনেক চিনি অবিক্রিত থাকায় মজুদ রয়েছে।

তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি ট্রেড গ্যাপ অর্থ পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, অর্থ পেলেই কৃষকদের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে।

স/অ