নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

মঞ্জুরুল আলম মাসুম:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকার কৃষক কালাম মেম্বার ছয় বছর ধরে মাল্টা চাষ করছেন। ১০ শতক জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। এখন জমি বেড়ে হয়েছে প্রায় পাঁচ বিঘা। ফলের পাশাপাশি চারার ব্যবসায় ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন। গত বছর তিনি প্রতিটি ৫০ টাকা দরে প্রায় সাত লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। নাটোর ছাড়াও পাবনা, রাজশাহীর জেলায় তিনি এ চারা বিক্রি করেছেন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান দুই বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, মাল্টা চাষ যে কোন শস্য আবাদের চেয়ে লাভজনক এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল।

শুধু কৃষক কালাম মেম্বর, সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানই নয় তাদের মতো বাগাতিপাড়া উপজেলার অনেক তরুনও এখন মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। উপজেলার দয়ারামপুর এলাকার কৃষক জাহিদুল এবং চক গোয়াস গ্রামের কৃষক শিঠুও মাল্টার চাষ শুরু করেছিলেন ছয় বছর আগে। ২০১৩ সালে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এই দু’জন কৃষকের জমিতে প্রথম প্রদর্শনী খামার তৈরী করা হয়।

মাল্টা গাছের পরিচর্যা অনেকটা পেয়ারা গাছের মত। জৈব সার হলেই চলে। ক্ষেত্র বিশেষে সেচের প্রয়োজন হয়। তবে পাতাকে মাকড়শার হাত থেকে রক্ষা করতে সীমিত কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। দশ থেকে পনের বছর ধরে একটানা ফল দেয় এক একটি গাছ। আট থেকে দশ ফুট উচ্চতার এক একটি গাছ থেকে মৌসুমে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ মাল্টা পাওয়া যায়। পাঁচটি মাল্টার ওজন এক কেজি। এই সেপ্টেম্বর মাস মাল্টার ভরা মৌসুম।

তমালতলার ফল ব্যবসায়ী জাফর বলেন, আমি বাগাতিপাড়ার বাগানগুলো থেকে তিন-চারদিন পর পর মাল্টা কিনে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। অপর ক্রেতা ফিরোজ জানালেন, এই মাল্টা উপরে সবুজ, ভেতরে খুব মিষ্টি। তাই বাজারে চাহিদা ব্যাপক। বাগান থেকে একশ’ থেকে একশ’ কুড়ি টাকা কেজি দরে কিনে বিক্রি করি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে।

মাল্টার বাগান আশা জাগিয়েছে উপজেলার কৃষকদের। শুধু মাল্টা উৎপাদনই নয়, গাছের চারা তৈরীতেও ঝুঁকছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। বাতাবী লেবুর গাছের ডালের সাথে মাল্টা গাছের ডাল গ্রাফটিং করে মাল্টার চারা তৈরী সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী। তিনি বলেন, চলতি মওসুমে এই উপজেলায় সাড়ে চার হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। এখানকার মাল্টার মিষ্টতা ও স্বাদ বাজারের প্রচলিত মাল্টার চেয়েও বেশী। ক্ষতিকর কীটনাশক এবং প্রিজারভেটিভ না থাকায় সজীব এই মাল্টা অর্গাণিকও বটে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত সরকার প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন অপ্রচলিত ফল ও ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে নাটোরের কৃষি। বাজারে চাহিদা থাকায় সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও মাল্টার চাষ সম্প্রসারিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।