নাজমুল হোসেন শান্ত কেন একইসাথে সম্ভাবনা ও সমস্যা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই প্রতিবেদন লেখার সময়েও শান্ত দুই নম্বরে আছেন। শান্তর দল সিলেট স্ট্রাইকার্স চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেরই অন্যতম সেরা দল, এখনও কোনও ম্যাচে হারেনি সিলেট। এখানে শান্তর অবদানও বড়। এখনও পর্যন্ত একটি ৫৭ রানের ইনিংস এবং দুটি চল্লিশের ঘরে ইনিংস খেলেছেন তিনি।

ঢাকা ডমিনেটরসের বিপক্ষে গত সপ্তাহে ৫৭ রানের ইনিংসটি খেলেছেন শান্ত ১৪৬ স্ট্রাইক রেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শান্ত’র মূল সমস্যা এখানেই, এই ১৪৬ স্ট্রাইক রেট তো দূরের কথা এর ধারেকাছেও ধরে রাখতে পারছেন না তিনি।

এখনও বিপিএল-২০২৩ এর অন্যতম সেরা রান সংগ্রাহকের স্ট্রাইক রেট ১১১। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে যারা শীর্ষ দশজন রান সংগ্রাহকদের মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত’র স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে কম।

এখানে আফিফ হোসেনের ১১৯ ছাড়া কারও স্ট্রাইক রেটই ১২০ এর নিচে নয়। জাতীয় দলের হয়ে এই স্ট্রাইক রেটের গড় কমে হয় ১০৮ এ।

নাজমুল হোসেন শান্ত’র ওয়ানডে স্ট্রাইক রেট আরও শোচনীয়- ৬০।

স্ট্রাইক রেট এতো কম কেন?

এই স্ট্রাইক রেটকে স্বাভাবিক বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং প্রথম ডিভিশনের ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।

সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে, “প্রত্যেকটা দলেরই আলাদা পরিকল্পনা থাকে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সিলেট চায় শান্ত যাতে অন্তত ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থাকেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শান্ত’র স্ট্রাইক রেট কমে যাচ্ছে।”

নাজমুল হোসেন শান্ত’র কথা যখন বিবেচনা করবেন তখন বাস্তবতা দেখতে হবে বলছেন এই বিশ্লেষক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখনও পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্ত’র ওপরেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আউটপুট আশানুরূপ হয়নি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, “অনুর্ধ্ব ১৯ এ কিংবা তারও আগে যে শান্তকে দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা যে টেকনিক দেখে প্রত্যাশা করেছিলেন, শান্ত এটাকে আর সামনে এগিয়ে নিতে পারেননি।”

বিশেষ বোলারদের বল কাট অথবা ড্রাইভ করতে গিয়ে টেকনিকাল দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে বলছেন সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।

নাজমুল হোসেন শান্ত জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবার খেলেছেন ২০১৭ সালে। ছয় বছর সময়ে শান্ত জাতীয় দলে টেস্টে খেলেছেন ৪০ ইনিংস, ২৫ গড়ে রান তুলেছেন তিনি।

পনেরো ওয়ানডেতে নাজমুল হোসেন শান্ত’র গড় ১৪। তিনিই ছিলেন ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১১৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন।

বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ মনে করেন, শান্ত লেগসাইডে শটের রেঞ্জ কম, যে কারণে শান্তকে যখন উইকেটের দিক থেকে ডান হাতি পেস বোলার বল করেন সেই শটগুলো শান্ত লেগসাইডে ঘোরাতে পারেন না সাধারণত।

বাংলাদেশে যেসব কন্ডিশনে শান্ত ফাস্ট বোলারদের মোকাবেলা করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেটের সাহায্য ও বোলারের গতি মিলিয়ে ঘণ্টায় পাঁচ থেকে দশ কিলোমিটার বেড়ে যায়। এখানে স্বভাবতই শান্ত ভোগেন।

সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি মনে করেন, যে টেকনিকে শান্ত আন্ডার নাইন্টিন খেলেছেন সেখানে শান্ত কোনও উন্নতি আনতে পারেননি।

বিসিবি হয়তো কোচ দেবে কিংবা সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দেবে কিন্তু ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত টেকনিকের উন্নতি হয় বলে মনে করেন এিই বিশ্লেষক।

তবুও তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে দূরে সরার পরে শান্ত ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে খেলছেন বলছেন সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম মনে করেন, শান্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে ভারসাম্য আনেন। তিনি এই ক্রিকেটারের ওপর প্রবল ভরসার কথা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা